Friday, November 21, 2014

আমাদের বাংলা ব্লগার ফোরামের আড্ডা ও বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভা


বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ আর তাগিদ নিয়েই যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা ব্লগ হিসাবে আমাদের বাংলার যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং এযাবৎ ব্লগটি তার এক বছর পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে। উক্ত ব্লগকে সামনে রেখে ব্লগের লেখক, সাহিত্যিকদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে আমাদের বাংলা ব্লগার ফোরাম। নেয়া হয়েছে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ের উপর নানা রকম কর্ম তৎপরতা এবং তারই ধারাবাহিকতায় গত এক বছর যাবত ফোরামটি প্রতি মাসে সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করে আসছে।
গত ১৯ নভেম্বর আমাদের বাংলা ব্লগার ফোরামের মাসিক আড্ডা ও আমাদের বাংলা ব্লগের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত সভায় যথারীতি আড্ডা শেষে বর্ষপূর্তি নিয়ে মুল আলোচনার মধ্যে ছিল তারিখ, সময় ও স্থান নির্ধারণ, অনুষ্ঠানের কর্মসূচী ও বিবিধ বিষয়। এতে আগামী ৩০ নভেম্বর, রবিবার বিকাল ৪টায় ব্লগের বর্ষপূর্তি উদযাপনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের কর্মসূচী হিসাবে থাকবে আমাদের বাংলা ব্লগের কবিদের কবিতা পাঠ, আলোচনা, আমাদের বাংলা প্রকাশনা ও ব্লগার আহমেদ হোসেন বাবলু রচিত গানের সিডি'র মোড়ক উন্মোচন। সাথে সাথে থাকছে বিশেষ আকর্ষণ বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কবিদের রচনা নিয়ে পঞ্চকবির কবিতা ও গানের বিশেষ অনুষ্ঠান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কবি গোলাম কবির, মজিবুল হক মনি, ময়নুর রহমান বাবুল, ফারুক আহমেদ রনি, আবু তাহের, ইয়াসমিন মাঝি পলিন, সাগর রাহমান, হেলাল আহমদ, ইকবাল হোসেন বাল্মীকি, আহমেদ হোসেন বাবলু, সাজিয়া স্নিগ্ধা ও জাকির হোসেন পারভেজ ।
আমাদের বাংলার পক্ষ থেকে আগামী ৩০ নভেম্বর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। 


আমাদের বাংলা প্রকাশনায় যাদের লেখা সম্পৃক্ত হলাে

আমাদের বাংলা প্রকাশনায় যাদের লেখা সম্পৃক্ত হলাে

:
সূচি
প্রবন্ধ
মিলটন রহমান : অলকানন্দার গায়ক মার্কেজ
স্বপন সাহা : আমাদের বাংলার যাত্রা শুভ হোক
ফারুক আহমেদ রনি : ব্লগ বিষয়ক বিপ্তি ভাবনা
জে. শুভ : ছটাক নাটক
সাজিয়া স্নিগ্ধা : সহজ কথা
মোস্তাক আহমাদ দীন : কবিতা-বিষয়ক কবিতা ও অন্যান্য
টি এম আহমেদ কায়সার : আধুনিক জীবন-মন্ত্র অথবা কবি দিলওয়ারের দুটি পঙ্ক্তি
ইমন চৌধুরী : কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না, ঈদ সবার জন্য!
কৌশিক : আমার অস্তিত্বের দর্শন
কবিতা
আতাউর রহমান মিলাদ : জন্মপাপ
আসাদ মান্নান : কবির নীলিমা
আবু মকসুদ : পাশে রেখে শুদ্ধ শিশির-৯
আঞ্জুমান রোজী : দিকভ্রম
আহমেদ ফায়সাল : চিত্রকল্প
আনোয়ারুল ইসলাম অভি : আমাদের কথোপকথন
ইকবাল হোসেন বুলবুল : তুলে নাও নগর
ইয়াসমিন মাঝি‏ : চন্দ্রমুখীও ছিল একদিন
উদয় শংকর দুর্জয় : তোমাদের জন্য জমা থাক সমস্ত ঘৃণা আর অভিশাপ
এম মোসাইদ খান : হিম ঘরে
ওয়ালি মাহমুদ : নবদ্বীপ: আলোচ্য-ধ্বনি
কামরুন নাহার রুনু : টাইম আপ
কাজল রশীদ : বর্ষ প্রত্যাশা
কাজরী তিথি জামান : অনধিকার
খালেদ রাজ্জাক : সন্তানের গ্রাম
গোলাম কবির : চামেলি
চন্দনকৃষ্ণ পাল : অন্যমনস্ক শ্রাবণ সন্ধ্যা
চৈতি আহমেদ : কন্যারা জলজ নয়
জাকির হোসেন পারভেজ : সংলাপ
তুহিন চৌধুরী : কুমুদী
দিলু নাসের : তোমার জন্য
দেলোয়ার মুহাম্মদ : তিলকটি ও সুন্দর বলেছি
নাজনীন খলিল : পিছনে পায়ের দাগ রেখে আসি
নম্রতা : ধুপছায়া মাস ও কার্তিক বছর
নদী : তুমি
নায়না কর : বিশ্বাস
ফকির ইলিয়াস : দায়ের দাগপর্ব
ফায়সাল আইয়ূব : স্বজন ভজন করে সুস্থতা কুড়াই
ফজলুল হক : লৌকিক
ফারহানা খানম : হলুদ প্রজাপতি
ফারুক যোশী : শ্মশ্র“মণ্ডিত ৭১
ফারহান ইশরাক : প্রতœকলস
মিতুল দত্ত : চতুরঙ্গ
মোনালিসা চট্টোপাধ্যায় : একা
মজিবুল হক মনি : অহংকারী রাজকুমারী
মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন : পূর্ণিমা
মুহিত চৌধুরী : স্বপ্নের রঙ
মাহফুজুর রহমান (রোকন যোহর) : আর পারি না বলে
মুনিরা চৌধুরী : মুনিরাকথা ২১, ২২
মেহের নিগার : সবুজ দেখবো কোথায়
রুমী আহমেদ : বিষণœতায় পুড়ি একই চিতায়
লিপি হালদার : ফিরে যাবার পথ সব সময়ই খোলা
লুৎফুর রহমান : বীরাঙ্গনা রমা
শোয়াইব জিবরান : লাল বসন্তের গান
শামীমা শাহীন : আমি পারি
শাহনেওয়াজ রকি : পাওয়া না পাওয়া
সৌমিত্র দেব : দেখা না দেখা
সৈয়দ রুম্মান : স্মৃতিতে বিপ্লব
সোনম মনি : ছোঁয়া
সুমনা হক বন্যা : শুধু একবার...
হোসনে আরা হেনা : পোষ্য
গল্প
কুলদা রায় : ঈশ্বরের চোখ : আদিপাঠ
ফরিদা ইয়াসমিন জেসী : বেণুলতা
মুস্তাফিজ শফি : মাধবী কিংবা বনলতার শেষ বোঝাপড়া
ময়নূর রহমান বাবুল : সুখের নরকবাস
মোহনা হাসান প্রেমা : হলো না...
সায়েম চৌধুরী : ইমাম তজম্মুল আলীর ধর্মত্যাগ সংক্রান্ত জটিলতা
সাগর রহমান : অন্য শরীরে রাখি কৃষ্ণচূড়া মন

Thursday, October 30, 2014

লাশ নিয়ে ---!

লাশ নিয়ে ---!

লাশ নিয়ে শুধু আর রাজনীতি নয়
লাশ নিয়ে বাঁশ দেওয়া কবিতাও হয়।
ধর্মের টুপি আর নামাবলি জয়
যেইভাবে পারো করো থাকবেনা ভয়!
লাশে যতো গন্ধই হোক সবে সয়
মরলেও স্বর্গীয় হয় পরিচয়!
বেচে থাকা জীবনের যতো ত্রুটিময়
গন্ধ ও দ্বন্দ্ব ঢেকে হবে ক্ষয়!
কবরে ও চিতাতে হবে নির্ভয়
দোয়া আর প্রার্থনা যদি সাথে রয়!
পুরোহিত মোল্লারা সবে তাই কয়
করো কাজ ধর্মের আর কিছু নয়!
ভাবি তবে কেনো করি বিদ্যার মেলা
সেখানেতো জমা হয় জ্ঞ্যানীদের চেলা
বই জমে ঢোল বাজে সংস্কৃতি খেলা
নেচে গেয়ে কেটে যায় পড়ে যায় বেলা!
মনের মাধুরী বয়ে ফিরে যাই ঘরে
নিয়ে যাই ভালোলাগা স্মৃতি বুকে করে!
(লন্ডন ১৬ অক্টোবর ২০১৪)

ব্লগ বিষয়ক বিক্ষিপ্ত ভাবনা


Posted by Faruk Ahmed Roni on October 30, 2014 at 1:47pm in ফিচার

ব্লগ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বার বার আহতবোধ করছি। ব্লগ নিয়ে বাংলাদেশে বা বাঙালি মানসে যে বিতর্কের অবস্থান নিয়েছে সেটা রীতিমত অপরিহারযোগ্য একটি বিষয়। ব্লগ কি বা কেন? সে বিষয়টা যাদের কাছে এখনো পরিষ্কার না, তাদের জন্য ব্লগ বা ব্লগার মানে নাস্তিকতাবাদ! দুঃখের বিষয় হচ্ছে এটা কেবলমাত্র আমাদের বাংলাদেশেই সম্ভব হচ্ছে কারণ আমাদের ক্ষুদ্র মন-মানসিকতা, মুক্তচিন্তার অভাবই এমন একটি কঠিন অবস্থানের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আসলেই কি ব্লগ নিয়ে সচেতন?

২০০৫ সালের আগেও বাঙালি লেখক বা পাঠকের কাছে বস্নগ বা ব্লগার সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা ছিলনা। তাছাড়া ব্লগের আদর্শগত বা মৌলিক বিষয় নিয়ে আমাদের কখনও মাথাব্যথা বা জানার কোন সুযোগও হয়ে ওঠেনি। যদিও বস্নগের জন্মটা ছিল একানত্মই ইউনিভার্সিটিতে কিছু রিসার্চ কাজ বা গ্রুপ ফোরাম হিসাবে ওয়েবসাইটে একক বা গ্রুপের কাজগুলো প্রকাশের মাধ্যমে শেয়ার করা হতো। যাকে web log বলা হতো, যার উচ্চারণ (web log) হিসাবে প্রচলিত। ক্রমান্বয়ে তার সম্পাদিত রূপ নেয় নষড়ম হিসাবে এবং ওয়েবলগ্‌ সম্পাদনা করেন এবং লিখেন এমন লেখককেই বস্নগার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে আসছে। বস্নগ হচ্ছে নিজের কথা, মক্তচিন্তা বা ব্যক্তিগত মত প্রকাশের একটি মাধ্যম বলা যায়।- "In a sense who you are has always been a story that you told to yourself. Now your self is a story that you tell to others"

জাস্টিন হল সোয়ার্থমোর কলেজে অধ্যয়ন কালে ১৯৯৪ সালে তার নিজের লেখা বা জার্নাল ওয়েবলগ করার মাধ্যমে তার ব্লগার হিসাবে যাত্রা শুরু এবং তিনি আদি ব্লগাদের একজন হিসাবে বিবেচিত। তাছাড়াও ব্লগ লেখক হিসাবে ৯০-এর দশকের আরো কিছু পরিচিত weblogger দের মধ্যে ক্যামেরুন বারেট- এর ক্যামওয়ার্ল্ড, ১৯৯৮ সালে ব্রুস আবেলসন তার ওপেন ডায়রি প্রকাশনা, বা রেবেকা ব্লাড-এর যার যাত্রা শুরু হয় রেবেকাস্‌ পকেট নামে একক ব্লগ এবং ব্র্যাড ফিটজপ্যাট্রিক শুরু করেন তার লাইভ জার্নাল লেখার মাধ্যমে।

মূলত তারা বস্নগে (বিনষড়ম) নিজের লেখা প্রবন্ধ, বা পছন্দের বিভিন্ন বিষয় ও তাতে মনত্মব্য বা প্রতিনত্মব্য প্রকাশের সহজ মাধ্যম সংম্পৃক্তকরনের কারণেই একজন সাধারণ পাঠক বা লেখকের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। বস্নগকে সহজতরভাবে ব্যাখা করা যায়, যেমন-

“…the first journalistic model that actually harnesses rather than merely exploits the true democratic nature of the web. It’s a new medium finally finding a unique voice.”

২০০৫ সালে সর্বপ্রথম বাংলাবস্নগ হিসাবে বস্নগের আদর্শ নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সামওয়্যারইনব্লগ। তারপর ২০০৭ সালে সচলায়তন, ২০০৮ সাথে প্রথম আলোবস্নগ ছাড়াও ধীরে ধীরে বাংলা ব্লগের জন্ম হতে থাকে ক্রমান্বয়ে। প্রথম দিকে বাংলা বস্নগে লেখালেখি শুরু করেন এমন পরিচিত লেখক কবির সংখ্যা খুবই অল্প ছিলো কিন' তার বিসত্মার শুরম্ন হয় বলতে গেলে ২০০৮ সাল থেকে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৯ তারিখে বাংলা বস্নগ দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।

ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে যুদ্ধাপোরাধী কাদের মোলস্নার ফাঁসির রায়ের পক্ষে শাহবাগে আন্দোলনকে সামনে নিয়ে বাংলা বস্নগ বা বস্নগার সম্পর্কে রাতারাতি বাংলাদেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষসহ সাধারণ মানুষের কাছে নতুনমাত্রা যোগ হয়। যার ফলশ্রুতিতে গণজাগরন মঞ্চ বা প্রজন্ম চত্বরের অবতারণা যার উত্তোরন স্বাধীনতা ও প্রগতিশীলতার পক্ষের শক্তি হিসাবে। ঠিক সেই সময়ই আন্দোলনকারী বস্নগার রাজীব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বস্নগে লেখালেখির কারণে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন। রাজিবকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার অপশক্তির পক্ষপাতিত্বের বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যায় মানুষের কাছে। সেই মামলার অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তিতে বলা হয়, ইসলামধর্ম সম্পর্কে বস্নগে বাজে মনত্মব্য করার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। যার সূত্রধরে লাইমলাইটে আসে হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটি। যাদের দাবি বস্নগার মানে নাসিত্মক এবং তারা নাসিত্মক মুরতাদ ফতোয়া দিয়ে বস্নগারদের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবি নিয়ে রাসত্মায় নেমে আসে। বাংলাদেশের এক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল লোকজন তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে এরকম একটি সংকটময় সময়ের জন্ম দিয়েছে যাতে প্রগতি ও প্রতিক্রিয়াশীলদের নামে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। বস্নগের মত সুন্দর এবং স্বচ্ছ পস্নাটফর্ম এবং বস্নগারদের নিয়ে শুরু হয় বিবেকবর্ধিত সমালোচনার ঝড়। বস্নগারদের নাসিত্মক ও মুরতাদ আখ্যায়িত করার স্পর্ধা দেখাতে পেরেছে একমাত্র অল্পকিছু ধর্ম সম্পর্কে প্রতিক্রিয়াশীল ব্লগারদের কারণে, যারা ধর্ম বিদ্বেষী কিছু কটূক্তির মাধ্যমে মুক্তচিনত্মাকে কাজে লাগিয়েছেন। সাথে সাথে তারা অবশ্যই ব্লগের মর্যাদাকেও ক্ষুন্ন করেছেন। কারণ ব্লগ মুক্তচিন্তার সুযোগ করে দিয়েছে ঠিকই কিন' কোন ধর্ম, বর্ণ, জাতি বিদ্বেষী কটাক্ষ করার সুযোগ শুধু বস্নগে কেন পৃথিবীর গণতান্ত্রিক সমাজে এবং মানবাধিকার আইনেরও পরিপন্থী। একই ভাবে একক বা কোন ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে বস্নগারদের সরাসরি নাসিত্মক বা মুরতাদ অপবাদ দেয়া মারাত্মক রকমের মানবতা বিরোধী অপরাধ। অবশ্যই মনে রাখতে হবে আজকে যারা ফেইসবুক ব্যবহারকারী তারাও ব্লগার, সেড়্গেত্রে প্রতিক্রিয়াশীলদের দেয়া ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আপনিও একজন নাস্তিক! তাই ফতোয়া দেয়ার আগে জেনে নিন আপনার পরিবারে কতজন ফেইসবুক ব্যবহারকারী, আপনার এবং আপনার সংগঠনের কার্যকলাপ কতটা ব্লগে প্রকাশ এবং প্রচারিত হচ্ছে। বস্নগে যেমন রয়েছে মুক্তচিনত্মা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপক সুযোগ তেমনি প্রতিটি বস্নগের নীতিগত কিছু কাঠামো রয়েছে, তাছাড়াও সার্বিকভাবে বস্নগের যথারীতি নিয়মতান্ত্রিক আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তাই ব্লগারদের সেক্ষেত্রে সব সময় নিশ্চিত থাকা বাঞ্ছনীয়।

গোটা বিশ্বের প্রচার এবং প্রকাশনা মাধ্যম এখন হাতের আঙুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ, ডায়রি বা জার্নাল প্রকাশনার মাধ্যম হিসাবে যে ব্লগের জন্ম হয়েছিল সেটাই আজ চরম বাসত্মবতা নিয়ে আমাদের সামনে ফেইসবুক বা টুইটারে প্রতিফলিত। আজ ফেইসবুকে বা টুইটারে প্রতিদিন যে পরিমান স্ট্যাটাস আসে তার বেশিরভাগই আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি বা সামাজিক অবস্থান এবং কর্মতৎপরতা নিয়েই প্রকাশ হয়ে হয়ে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক জীবনে নানা রকম প্রভাবও ফেলছে। তাছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে ব্লগিং মানুষের মসিত্মস্কের ক্লান্তি, বিষণ্নতা এবং হতাশা মুক্তির জন্য যথেষ্ট সহায়ক। অনেকের মতে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধোক হিসাবেও সাহায্য করে, যেমন প্রাশ্চাত্যের একজন লেখক ব্লগিং সর্ম্পকে লিখতে গিয়ে বলেন;

"During my difficult time, blogging allowed me to connect with people in ways that lifted me out of the darkness. And I found that the act of blogging lowered my blood pressure during a very stressful period. Writing every day was an important part of healing both my mind and body."

আমার বিশ্বাস এতে কোন রকম সন্ধেহ নেই। মুলত আজকের এই গ্লোবালাইজ জীবনে পৃথিবীর যে কোন দেশের একানত্মই নুন্যতম শিক্ষিত মানুষও ব্লগের প্রতি দুর্বল, কমবেশি সবাই লিখতে চেষ্টা করছে এবং সবাই বস্নগার হিসাবে দাবী রাখতে পারে। বস্নগিং আত্মতৃপ্তি শুধু নয় আত্মজ্ঞানেও পরিশুদ্ধ্‌ করতে সহায়ক।

সাথে সাথে বস্নগ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ এবং সর্বশেষ নেটওয়ার্কিং মার্কেটিং প্রন্থা‌ও বলা যেতে পারে, যার মাধ্যমে কোটী কোটী পাউন্ড ডলার আয়ের সোর্স হিসাবে কাজ করছে ইন্টারনেট সার্ভিসগুলো, যেমন গুগল, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি সর্বচ্চ অর্থনেতিক মুনাফা লুফে নিচ্ছে আর তা কেবলই সম্ভব হচ্ছে আমাদের প্রতিদিনের ব্লগিং এর মাধ্যমে। এরকম প্রতিদিনই বস্নগিং থেকে এক শ্রেনীর ছোট ছোট ব্যবসায়ীরাও অর্থনৈতিক ভাবে সহজভাবে লাভবান হচ্ছে। একসময় নেটওয়ার্কিং মার্কেটিংকে সোশ্যাল এবং মানবিকশক্তির সাইকোপ্যাথপ্রযুক্তি হিসাবে সহজভাবে উপার্জনের একটি উত্তমপন'া বিবেচিত হয়েছিল, যাকে আমরা ফরমুলায় যদি বলি: One percent of 100 people's efforts are better than 100 percent of your own effort. অর্থাৎ একজনের শতভাগ প্রচেষ্টা বা পরিশ্রমের বদলে শতভাগ লোকের এক একভাগ প্রচেষ্টায় লাভবান হবার যে পদ্ধতি সেটা ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেটের আয়ের উৎস হিসাবে। যেমন ফেইসবুক, গুগুল, মাইপেস্নস বা টুইটারের মত বস্নগ পস্নাটফর্মগুলোতে আমাদের প্রত্যেকের অংশগ্রহণ তাদের রাতারাতি আকাশছুঁয়া বাণিজ্যের পাহাড় করে তুলছে।

অবশ্যই আমরাও প্রত্যেকেই ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারি কিন্ত সেটা কেমন করে, বিষয়টি কেবলমাত্র জানার অপেক্ষা মাত্র। যাহা নিয়ে আমরা না ভাবলেও পশ্চিমা দেশগুলো ঠিকই অর্থনৈতিক ভাবেও সুযোগ সুবিধা নিতে পারছে।

বাংলাদেশে বস্নগকে যতটাই আমরা বির্তকিত করিনা কেন, ব্লগ হচ্ছে মুনত্মচিন্তা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুধু নয়, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে এবং সাথে সাথে অর্থনৈতিক মুক্তির পথেও একটি যুগপযোগী বিপ্লব বলা যেতে পারে।

আসুন আমরা ব্লগকে সৃজনশীল ও প্রগতির মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করি এবং প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে প্রতিহত করি, যারা ব্লগ এবং ব্লগারদের নিয়ে বির্তকের পথে অবস'ান নিচ্ছে। সবশেষে আমার একটি মাত্র প্রত্যাশা বস্নগ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নান্দনিক পস্নাটফর্ম হিসাবে কাজ করুক, ব্লগ মানুষের প্রতিদিনের চিন্তাশক্তি ও বিবেকের প্রতিনিধিত্ব করুক।

জয় হোক ব্লগ ও ব্লগবাসীদের ।

Sunday, July 13, 2014

প্যালেস্টাইন আমার রক্তস্নাত বেলাভূমি




কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পৃথিবীকে ঘিরে 
অমীমাংসিত চুক্তি হয় মানুষের রক্তের বিনিময়ে। 
জ্বলে বিশ্বায়নের সুশৃঙ্খল স্থিতির দশদিগন্ত,
জ্বলে গাজা উপত্যকার কোমল নারী ও শিশুরা!

আজো ক্রুশেবিদ্ধ যিশুর রক্তের দাগ শুকায়নি
আজো জেরুজালেমে, নিকৃষ্ট জালেমদেরই 
অস্ত্রের মহড়ায় কম্পিত যীশুর বক্ষ!
আজো ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বাতাসে বাতাসে
প্যালেস্টাইন আর জেরুজালেমের আকাশ প্রদক্ষিণ করে।

রক্তাক্ত আজ আরব সাগরের স্বচ্ছজল
প্রতিশোধের পীড়িত বিষক্রিয়া নিষ্ক্রিয় করে 
মানবতার সর্বশেষ প্রভাবটুকুও।
মানুষের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের এমন বিষাদময় প্রবণতা 
কেবলই লূ-হাওয়ায় প্রতিশ্রুত হয়।

আমাদের পৃথিবী, একান্তই কামনার সুশীতল আবাসভূমি 
আজ ধীরে ধীরে অস্পৃহ হয়ে যাচ্ছে;
বিষাক্ত বাতাসে উড়ছে বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছেটুকু
অন্ধকারে কালো আবরণে বিলুপ্ত হচ্ছে প্যালেস্টাইনের আকাশ! 

কিসের আয়োজনে সীমানা বর্ধিত হয় রক্তের বিনিময়ে!
মানুষের বিরুদ্ধে হিংসার বৈরী  সহিংসতা
পুড়ে নিপুণ বিশ্বাসের আঙিনা, রক্তাক্ত হয় 
মরুভূমির চিক চিক বালুকণা। 
শিশু-কিশোর কলম ফেলে বুক পেতে রাখে তাক করা
অস্ত্রের মুখে। 
বিষাক্ত কার্বনিক ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস গ্রহণে
মৃত্যুর ওপারে জীবনের স্বাদ নিতে আয়ুষ্মান হয়!

যিহোবা অথবা ঈশ্বর কি দেখছেন?
আজ বিশ্বাস বিন্যাস্ত হচ্ছে, ধর্মীয় মহিমা দ্বিধান্বিত!
তবে কি গাজার মানুষের রক্তের সাথে 
যিশুর রক্তের কোন মিল নেই?
ঈশ্বর তোমাকেই জবাব দিতে হবে আজ।
যিহোবা যেমন করে উঠিয়ে নিয়েছিলে যিশুকে
আবার ফিরিয়ে দাও, আজ আবার যিশুকেই 
ফিরিয়ে দিতে হবে গাজা উপত্যাকায়।

স্বর্গের সিঁড়িতে বসে বিধাতা হাসেন;
তিনি দেখছেন, তাঁর দৃষ্টি স্ফীত হয়না!
নৃপতি, তিনি পরিত্রাণ খুঁজেন বিগ্রহ নিসর্গে।
বিকলাঙ্গ সভ্যতা, জরাগ্রস্ত মনুষ্যালয়!  
মানবতা মানে আবাবিলের প্রত্যাশায়
আর করজোড়ে মহাশূন্যে দু’হাত উত্তোলন 
করবেনা। 

বিধাতা, তুমি স্বর্গের প্রাসাদে বসে
জীবনের বিনিময়ে জীবন নিয়ন্ত্রণ করো
তুমি উচ্চাসনে আসীন সর্বশক্তিমান
আমি তোমার শক্তির পরীক্ষায় নতজানু,
প্রকম্পিত বিস্ফোরণের আতংকে তুমিও
আতংকিত হও, মানুষের রক্তে স্বর্গের দেয়ালে 
অঙ্কিত হোক- 'শ্বেত ঘরের' শক্তিধর প্রতিচ্ছবি।

আমাদের বাংলা: ছি তোমাদের ছি !

আমাদের বাংলা: ছি তোমাদের ছি !: ছি তোমাদের ছি ! Posted by  Ahmed Hussain Bablu  on July 12, 2014 at 12:32pm এ কোথাকার সভ্যতা আর এ কোন জাতির দেশ মানুষ মারার উল্ল...

ছি তোমাদের ছি !


ছি তোমাদের ছি !

এ কোথাকার সভ্যতা আর
এ কোন জাতির দেশ
মানুষ মারার উল্লাসে যে
বিষায় পরিবেশ ।
শিশুর রক্তে মা ভাসে রোজ
এমন অনাচার       
বিশ্ববাসী দেখবে চেয়ে
কেমন নির্বিকার ?
ঘৃণ্য এমন রাজনীতি, ধিক
কাপুরুষের দল
অস্ত্রে হয়েও শক্তিশালী
ভীরু মনোবল ।
নির্বিচারে মানুষ নিধন
কী পেয়েছে কী
আওয়াজ তুলুক বিশ্ববিবেক
ছি তোমাদের ছি !

আমাদের বাংলা: কৈফিয়ত

আমাদের বাংলা: কৈফিয়ত: কৈফিয়ত Posted by  আবু মকসুদ  on July 13, 2014 at 4:05pm প্রিয় পাঠক আপনাকে শুভেচ্ছা। আমি মাঝে মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে দুয়...

কৈফিয়ত


কৈফিয়ত




প্রিয় পাঠক আপনাকে শুভেচ্ছা। আমি মাঝে মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে দুয়েক ছত্র লিখি মনের ক্ষোভ, হতাশা, অক্ষমতা প্রকাশের জন্য, বলা বাহুল্য এসব লেখা উচ্চমার্গয় কিছু হয় না ওভাবে চিন্তা করেও লিখি না। নিজের ভাব অন্যের সাথে আদান প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা, এসব লেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কোন কারণ নেই, ফেইসবুকে কিংবা ব্লগে এরকম অসংখ্য লেখা অসংখ্য বার লেখা হয়েছে এবং হবে কিন্তু কোন প্রভাব রাখবে সে আশা বাতুলতা মাত্র। তবুও আমি এবং আমার মত আরো অনেকে পণ্ডশ্রম করে যাবে, কি কারণে এ প্রশ্নের উত্তর উহ্য থাকুক অথবা হয়ত কোন উত্তর নাই।
সম্প্রতি লেখা একটা ছড়া আপনাদের নজরে এসেছে দুয়েকজন সহৃদয় মন্তব্যও করেছেন, আমি প্রীত। ছড়াটা আপনাদের ভাবাতে পেরেছে নাড়া দিতে পেরেছে জেনে পুলকিত বোধ করছি। সাম্প্রতিক সময়ে ইজরাইল এবং ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে হতাহত শিশুদের কিছু ছবি ইন্টারনেটের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে নিষ্পাপ শিশুদের প্রাণহীন শরীর দেখে যেকোনো প্রাণীরই আত্মা কেঁদে উঠার কথা, যেহেতু আমিও প্রাণী প্রজাতি সেই হেতু এ ছবিগুলো আমাকেও ছুঁয়ে গেছে, ছুঁয়ে যাওয়ায় আমার অক্ষমতা কিংবা আক্রোশ আমি এভাবে ব্যক্ত করেছি। রাগের বহিঃপ্রকাশ কিংবা আক্রোশের অনুবাদ কোন নিয়ম নীতি মেনে হয় না, আমারও হয় নি। আমি শুধু সাময়িক উপশমের উপায় খুঁজতে চেয়েছি, হয়ত আমার এই উপায় সবার মন-পুত হবে না, না হওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আমি মনে করি তীব্র বা জোরালো কোন কর্মকাণ্ড আমরা যদি না দেখাতে পারি তা হলে এ সমস্যার আদৌ কোন সমাধান হবে না।
আমার লেখাটায় হিটলারের প্রতীকী পুনরুত্থান দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন মানবতার ঘৃণিত ব্যক্তির বন্দনাকে অনেকে আধুনিকতার বিপরীতে অবস্থান দেখছেন, অনেকেই একে ধর্ম যুদ্ধের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন। সবার মতের সাথে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বলতে চাই আমি হিটলারের অনুসারী নই ঐ যুদ্ধবাজকে আদর্শ মনে করার কোন কারণও আমি দেখি না কিন্তু ফিলিস্তিন এবং ইজরাইলের সমস্যার চিরস্থায়ী একটা সমাধানের জন্য আমি ওইরকম একচোখা কাউকে চাই। ইজরাইল এবং ফিলিস্তিনকে নিয়ে বিশ্ব যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে হিটলারের মত একচোখা উন্মাদই পারে এর এর একটা হেস্ত-নেস্ত করতে। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মত, সবাইকে একমত হতে হবে এর কোন দিব্যি আমি দিচ্ছি না।
ধর্ম রক্ষায় শয়তানের সাথে আঁতাত নতুন কিছু নয়, আমাদের সাহিত্যে কিংবা ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। দীর্ঘ লেখাও এ নিয়ে তৈরি করা সম্ভব আপাতত সে দিকে না গিয়ে এটুকুই শুধু বলব যে- মহামতি কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে পাণ্ডবদের পক্ষে যুদ্ধের দাওয়াত দিতে কর্ণের কাছে গিয়েছিলেন, কর্ণ নিশ্চয় ফেরেশতা সম্প্রদায়ের কেউ ছিলেন না। রাবণ বধের প্রাক্কালে রামকেও সুগ্রীব, বালির মত রাক্ষসদের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হিটলারের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাথে মিত্রতার বিষও ব্রিটেন আমেরিকাকে পান করতে হয়েছে, উল্লেখ্য পশ্চিমা বিশ্বের কাছে রাশিয়া এবং সমাজতন্ত্র তখন শয়তানের প্রতিরূপই ছিল।
যদিও আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন কারণ দেখছি না তবু সুহৃদ, শুভানুধ্যায়ীদের কাছে নিজের বক্তব্যকে পরিস্কার করার উদ্দেশ্যে এ লেখা। আশা করছি আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে পেরেছি, সবাইকে শুভেচ্ছা।
হিটলার বন্দনা-
ফিলিস্তিনে মরছে মানুষ
বিশ্ব বিবেক বন্ধ
আমেরিকা ব্রিটেন তাদের
চোখে ঠুলি, অন্ধ!
বিশ্ব মোড়ল দেখছে চেয়ে
গাজার বুকে লাশ
ইজ্রায়িলি পশুর দলে
করছে যে উল্লাস।
মরছে শিশু বৃদ্ধ নারী
মরছে যুবক ভাই
রক্ত নদী বইছে তবু
করছে যে খাঁই খাঁই।
পশুর দলে সমস্বরে
গাইছে ঘৃণার গান
এই পশুদের থামাতে চাই
হিটলারের উত্থান।
আসুক ফিরে আবার সেই
বীর পুরুষ হিটলার
সময় হলো ভাঙ্গতে আবার
জায়ানবাদীর ঘাড়।

আমাদের বাংলা: গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল

আমাদের বাংলা: গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল: গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল Posted by  Golam Kabir  on July 13, 2014 at 4:24pm গাজায় রক্তস্রোত এবং আজকের বিশ্বকাপ ফ...

গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল





গাজায় রক্তস্রোত এবং আজকের বিশ্বকাপ ফাইনাল!

আজকে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা। খুব ভালো লাগতো যদি এই মূহুর্তে জানতে পারতাম- খেলোয়াড়রা মানব হত্যা শিশু হত্যা বন্ধ করার দাবিতে আজকের খেলা থেকে অনির্দিষ্টকাল বিরত থাকার ঘোষনা দিয়েছেন!
ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে তোলপাড় ছিলো বিশ্ব। ইয়াসির আরাফাতের মতো নেতাও এই সমস্যা নিরসনে জীবন বিপন্ন করেও সমাধানে পৌছুতে পারেননি। ধর্মভিত্তিক এই সমস্যাই শুধু নয় আরো বহুবিধ সমস্যাজাত চরম অমানবিক পৈশাচিক লোমহর্ষক ঘটনা পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বের আনাচেকানাচে ঘটে চলেছে ধারাবাহিকভাবে, তার হিসাব নেই। রাজনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক ভাবে ধর্ম বিষয়টির অনুপ্রবেশই এই সমস্যটির সৃষ্টি করেছে আদিকাল থেকেই। 
জেহাদ এবং ক্রসেড সংগঠিত হচ্ছে ঈশ্বর এবং আল্লাহ-এর নামে! এক দল অন্য দলকে মারছে স্বদলের স্রষ্টার হুকুমে! হুকুম গুলি বর্ণিত হয়েছে স্রষ্টাদের রচিত গ্রন্থসমুহে! সুতরাং কি করে শেষ হতে পারে এই অমানবিক পৈশাচিক শিশু হত্যা, মানব হত্যা, ধর্ষন, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি, কে করবে এর সমাপন! সুন্নি মুসলিম মতে ইমাম মেহেদী, খৃষ্টান মতে যিশুর উত্থান, হিন্দু মতে ব্রম্মের উত্থান এমনি অনেক মত ও পথের নানাবিধ প্রত্যাশাও রয়েছে মানব জাতির এবং সেইসব প্রত্যাশিত লগ্নে পৌছাবধি নানাবিধ সম্ভাব্য ঘটনার যে সকল বিবরণ বর্ণিত রয়েছে ঈশ্বরদের গ্রন্থগুলিতে, সেই মতে চলমান ঘটনাগুলির কারণ হিসেবে ঈশ্বরদের ইচ্ছারই প্রতিচ্ছবি মনে হয় এগুলো! তাছাড়া-''ঈশ্বরের ইচ্ছা ব্যতিত গাছের পাতাটিও নড়েনা" জাতীয় ধর্মীয়-মানবিক বিশ্বাস মতে এসবতো ঘটবেই, যেনো অনেকটা সেরকমই!
আমাদের বাংলাদেশে হুসেইন মযহাম্মেদ এরশাদের শাসনামলে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তার আগমনকে তাতক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় মনে হয়েছিলো এবং তার শুরুটাও ছিলো খানিকটা ব্যতিক্রমি
কিন্তু পরবর্ত্তীতে তিনিও যখন মাথায় টুপি নিয়ে শুক্রবারে মসজিদে মসজিদে গিয়ে তার অদ্ভুত স্বপ্নের কথা শুনিয়ে ধর্মপ্রাণ বাংগালি মোসলমানদের মগজ ধোলাই করে, নারীদের স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভুতিকে নাড়া দিয়ে অবশেষে সেই ধর্মীয় আবেশে ম্রিয়মান জাতিকে ক্রমে ক্রমে তার স্বৈরশাসনের জাতাকলে পিষ্ট করছিলেন তখন টের পেলো জাতি। ৯০ এর গণ উত্থানের মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় নিতে হলো সিংহাসন থেকে! অথচ তার অব্যাবহিতকাল পরেই অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি পেয়ে গেলেন ৩৫ টি আসন!
রামায়ন- এর রাবন দানবীয় অশুভ শক্তির বলে শুভ শক্তি (?) সম্পন্ন দেবতাদের শেষ করে দিতে প্রচেষ্ট থেকেও রামের শক্তির নিকট পরাস্ত হলো বাল্মিকীর রচনায়! কিন্তু বাংগালি কবি মাইকেল মধুসুদন সেই দানব রাবনের শৈর্য- বীর্যের প্রতি সম্মোহিত হয়ে রচনা করেছেন "মেঘনাদ বধ" মহাকাব্য, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে রয়েছে!
হিটলার জার্মান থেকে সারা বিশ্ব দখলের জন্য তার নাতসী বাহিনী নিয়ে বিষাক্ত বিষময় করে তুলেছিলো পৃথিবী সেখানেও ছিলো তার জায়ানবাদ, ধর্মবাদ! ইহুদীবাদকে তাই সে চেয়েছিলো কবর দিতে!
কিন্তু এখন যদি শোনা যায় " এরশাদের মতো একজন সিংহ পুরূষ দরকার দেশকে ঠিক করতে হলে" তাহলে কেমন শোনাবে তা? ঠিক সেভাবে যদি শোনা যায় হিটলারের মতো একজন জায়ানবাদী দরকার এখন ইহুদীবাদ ধ্বংসের জন্য- তাহলেই বা কেমন শোনায়! কেমন লাগে যখন তামিলে শত শত হিন্দু বিনাশ করে রাবন আর অসুরদের উত্তরসুরী?
কেনো মরে কাটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানী নামক মানুষেরা! কেনোই বা কাটাতার দিয়ে রচিত সীমান্ত! কেনো হিন্দুস্তান (আসলে- হিন্দুর স্থান) আর কেনোই বা পাকিস্তান ( আসলে- মুসলিম স্থান)!
বড়ই অমানবিক গাজায় বোমা মেরে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে শিশু হত্যা, বড়ই নির্মম! কিন্তু মানব জাতিকে ভাবতে হবে কোথা থেকে শুরু এর, কি হেতুতে!
গেলো বছর যখন সাভারে সহস্রাধিক শ্রমিক পরিচয়ের নারী-পুরুষ মানব সন্তানগুলোর নির্মম মৃত্যু হলো, যখন প্রতিদিন মৃত মানুষদের লাশ তোলা হচ্ছিলো দেশে তখন লন্ডনে বৈশাখী মেলার আনন্দ আয়োজন আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম স্টেটাস দিয়ে! আর তাই আজকের এই অনুভুতি বিশ্বকাপ খেলার ফাইনাল আনন্দ নিয়ে, ভালো লাগতো যদি না দেখতে হতো এই বুর্জুয়া-লালিত চোখ ও মগজ ধোলাইকারী আনন্দগুলো! বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়ামোদী মানুষদের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা।

লন্ডন ১৩ জুলাই ২০১৪

Saturday, July 12, 2014

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের গল্প : ভারতবর্ষ



‘সঈদুল’ রাখি বলল, ‘ আমাকে চুমু খেয়েছে।’

কিছু নদী আছে, যাতে জোয়ার-ভাটা খেলে না। হেমাঙ্গের মুখ সেই জাতীয়। মনোভাবের, মুখ দূরস্থান, তার মনেও কোনও ছায়া পড়ে না। অনুভব, আবেগ, এ-সব গ্রহণ করার মতো তার মন আছে কিনা, সে নিজেও ভাল বোঝে না। থাকলে, মুখে-চোখে না হোক, অন্তত মনে ধরা দেবে এই যদি হয় পূর্বশর্ত, তাহলে মানতেই হয় যে ও- ব্যাপারে আজও সে প্রামাণ্য নয়।
অনুভব, আবেগ-বিশেষত প্রেম সংক্রান্ত যেগুলো—সেসব সরল জিনিস। কিন্তু-আবেগ সমূহের মধ্যে জটিলতম যেগুলো, যেমন ধরা যাক, জিঘাংসা কি রিরংসা—যে দুটো নাকি মানবিক হয়েও অনেকখানি পাশবিক, একটা প্রমাণ তো রেখে যাবে তারা! একটা দাগ রেখে যাবে! মুখে-চোখে না রাখুক, অন্তত মনে! কিন্তু হেমাঙ্গের ক্ষেত্রে প্রমাণ কই যে তারা ছিল বা আছে? বিশেষত ওই জিঘাংসার ব্যাপারটা। না—না, সেরকম নেই কেউ তার জীবনে, তার জীবনে কখনও দেখা দেবে না সে-যে, খুন হতে পারে , তার মতো মানুষের হাতে। আত্মহত্যা? হ্যাঁ, সেও একটা খুন বটে, আবার ঠিক খুনও নয়। সেই জন্যই তো ফাঁসি হয় না, বা যাবজ্জীবন। প্রকৃত খুন হলে হত নিশ্চয়ই। তাছাড়া, তাই যদি হবে লোকে লিখে যায় কেন যে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়?’ মানে তো একটাই। আমাকে কেউ খুন করেনি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ খুনী নয়। তাই, রাগ-দুঃখ, আনন্দ-অভিমান থাকে থাক, না-থাকে থাক, শেষমেস অমনিই দাঁড়িয়েছে তার ভাবখানা। জন্ম-প্রতিবন্দী তো হয় অনেকে। হয় না? কালা, বোবা, জড়বুদ্ধি, বগলে-ক্রাচ, অন্ধ, হ্যাঁ জন্মান্ধ... কত রকম তো আছে। জোয়ার-ভাটা নেই, এমন নদী আছে কত।

‘ইনফ্যাক্ট’, প্রায় খবর পড়া গলায় রাখি বলল, আই হ্যাড টু স্লিপ উইথ হিম।’

হেমাঙ্গ চুপ করে আছে। থাকবে জানা ছিল। স্বামীকে ঠিক বুঝতে একটুও ভুল করেনি রাখি। ১৩ পেরিয়ে ১৪য় পড়ল তাদের দাম্পত্য, এ-টুকু না-বোঝার কথাও না। যাদের বলা যায় না, মেয়েরা এ-সব কথা তাদের বলে না। সেই সব স্বামীকে। মৃত্যু পর্যন্ত সে বোঝা বহে নিয়ে যায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে তার প্রয়োজন ছিল না। তাই বোঝা নামিয়ে রাখল। যদিও ঝাড়া দুমাস ধরে ভেবেছে। কেননা, ঘটনা তো মাস দু’ই আগের। সেই যেদিন বাবরি। তারপর, আজ, অবশেষে বোঝা নামিয়ে রাখল। যে, যা ছিল অবধারিত, অথচ, অযথা দেরি হচ্ছিল এবং অকারণে, তা ঘটে গেছে।

যা, বলার, তা বলা হয়ে গেছে, অন্তত, মোদ্দা কথা যেটুকু। কিন্তু, শত হলেও, ব্যাপারটা তো সারমেয়ো-সমাজের নিয়মে হয়নি। যে, মেটিং সিজনে এক কুকুরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক কুকুরির। আর মদ্দাটা ছিল ভারি ষণ্ডা, বাকিগুলো তাই লেজ গুটিয়ে তাকে পথ ছেড়ে দেয়। আর তাই, যা হবার, তা হয়ে গিয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আর উচ্চবাচ্য না করলে ব্যাপারটা ফলত তাই দাঁড়ায়। কিন্তু, গর্হিততম কাজ, এমন কি ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে এলেও, মানুষ মানুষই থেকে যায়। ফাঁসির দড়ি থেকে যে ঝুলছে, দুলছে, সকলেই জানে, সে একজন মানুষ। সে তুলনায় ৬ ডিসেম্বরের বাবরি ভাঙার দিন যা ঘটে গিয়েছে সে তো কিছুই না। সত্যি বলতে বাবরি মসজিদ যে তখনই ভাঙছে, রাখি জানত না। জানা গেল বিকেল ৭টার খবরে। আর ঘটনা ঘটেছে সেদিন দুপুরে। সঈদের টটি লেনের স্টুডিওয়। অবশ্য সঈদ হয়তো জানত মসজিদ ভাঙার ব্যাপারটা। বিবিসি তো তখন থেকেই দেখিয়েছিল, শাবল গাঁইতি নিয়ে যখন যখন ওরা গম্বুজে উঠে গেছে। সে নিশ্চয়ই দেখেছিল। সে যা জানত সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল রাখি। দোতলায় স্টুডিওয় অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে ছেলে সৌম্যকে বসিয়ে রেখে সে যখন নিচে নেমে এসেছিল, মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ কী ভেবে নিয়ে, কাঁধে হাত রেখেছিল রাখির। গুলি বর্ষণের মতো তার চক্ষুকোটর থেকে বেরিয়ে আসা, কী অনর্গল দৃষ্টিপাত। তার হাত ধরে সেভাবে বেডরুমে ঢুকেছিল সাঈদ, যেভাবে, যুদ্ধের সময় মানুষ আত্মরক্ষার্থে ট্রেঞ্জে ঢোকে। যদিও সেদিন সন্ধ্যাবেলা, ওদের ট্যাক্সিতে তুলে দেবার সময় পর্যন্ত সঈদ কিছুই বলেনি। কিন্তু, মসজিদের প্রথম গম্বুজ তখনই ভেঙে পড়ে। সেদিন শনিবার। দুপুরবেলা। যখন সঈদ বিছানা ভাঙছে। পরে সময় মিলিয়ে দেখেছে রাখি।
রাখি তাই কথা বাড়াল, ‘ইচ্ছা আমার ছিল না মোটেই। কিন্তু, জানো তো, হ্যাউ দিজ থিংস হ্যাপেন। অ্যান্ড ইন্সপাইট অব ইওরসেলফ।’

ঠিক দুমাসের মাথায় আজ আর এক শনিবার। আজও দুপুরবেলা। রাখির মাথা আজ হেমাঙ্গর বুকের কাছে। হেমাঙ্গর রোমবহুল লম্বা হাত তার উন্মুক্ত পিঠের ওপর মেরুদাঁড়ায় প্রারম্ব পর্যন্ত পড়ে আছে।
হেমাঙ্গ এতক্ষণ একটাও কথা বলেনি। কথা বলা দূরে থাক, একটা ভাবনাও তার মনে জাগেনি এখনও। ৬ ডিসেম্বর যখন বাবরি ভাঙা হচ্ছিল, সে ছিল ইন্দোরে। এন টি সি-র বন্ধ কারখানাগুলো নিয়ে লেবার সেক্রেটারি অহল্যা বান্দেকরের সঙ্গে মিটিং—সঙ্গে ওখানকার শ্রমিক নেতা লোকেশ গাউর, প্রকাশ জৈন এরা সব। হঠাৎ খবর এল। সেক্রেটারির এ্য্যান্টি চেম্বারে ‘সোনি’ টিভিতে তারাও বিবিসি-তে দেখল যা দেখার। তখন কি, যা ঘটছে, তার বেশি কিছু, কোনও ভাবনা, তাদের মনে এসেছিল? যা ঘটে যাচ্ছে, তাকে, ফর্ম এবং কন্টেন্টে, সর্বাংশে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল তখন? বলতে হয় তাই আমরা বলি, ওকে চিনি, ওটা জানি। এমনটা হবে জানতাম। কত ভুল জানি আমরা তা বোঝা যায়, জানার বাইরে যখন কিছু ঘটে যায়, তখন। ওই যে আমার হাতটা, যা এখন রাখির পিঠ জুড়ে আছে, কতদিনের চেনা, তবু আমি কি ওকে চিনি! ওকি, সত্যিই আমার। আমার বুকে যার নিশ্বাস পড়ছে, যে একতরফা, একা-একা ভালবাসে আমাকে, হ্যাঁ, ভালই তো বাসে, ভালবাসায় যে রেখেছে বিশ্বাস, সেও কি আমার খুব চেনা, জানা? আমি তার আবেগ-অনুভবকে চিনি?

‘কী ব্যাপার, তুমি কিছু বলছ না যে!’

কী যে বলা যায়, তা মনে এসে যাবে ভেবেই হেমাঙ্গ এতক্ষণ খাটের পাদদেশে টিভির দিকে তাকিয়ে ছিল। সুশিক্ষিত ওষ্ঠলীলা ও দুই হাতের নিপুণ মুদ্রা সহযোগে বোবা ও কালাদের জন্য টিভিতে খবর বলা হচ্ছে। চৌকো খুপরির মধ্যে বিলম্বিত লয়ে খবর পড়ে যাচ্ছে আর একটি মেয়ে, যদিও শোনা যাচ্ছে না কিছুই। হেমাঙ্গ শুনতে চেয়েছিল! বাবরির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এক জায়গায় সামিয়ানার নিচে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রামলালার বিগ্রহ। পূজা ও ভজন চলছে, তাও দেখাল। ভক্তবৃন্দের লম্বা লাইন। মিলিটারি। জনসভায় লালকৃষ্ণ আদবানি। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে রাখি ‘পরে শুনো আবার তো বলবে’ বলে সাউন্ড অফ করে দিয়েছে। কথার জন্য হেমাঙ্গ তাই ঘরজোড়া জিনিসপত্রের দিকে তাকায়। ডাইনিং স্পেসে চলে যায় তার দৃষ্টি, ঘর ছেড়ে। কাঁধে-পতাকা লেনিনের প্রাগ্রসর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘সৌম্য কোথায়?’

‘ওর তো আজ ছবির লেসন। ওর ওখানে গেছে।’

নামটা উচ্চারণ করল না রাখি। তাই হেমাঙ্গ জানতে চাইল, ‘সঈদের ওখানে?” নইলে তার প্রয়োজন ছিল না।

আদবানির ঠোঁট নড়ছে। মন্দির ওঁহি বানায়েঙ্গে।

‘লোকটার সঙ্গে হিটলারের একটা মিল আছে।’ গণতান্ত্রিক শিল্পী সঙ্ঘের নেতৃস্থানীয় সভ্য সঈদুল ইসলাম একদিন হেমাঙ্গের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘কোথায় বলতো?’

‘দু’জনেই ফ্যাসিস্ট?’

‘না’, সঈদুল বলেছিল, ক্যানভাসের মূল রঙ লালে সবুজে মিশিয়ে ও কিছুটা হরিদ্রাভ করে দিতে দিতে, ‘দু’জনকেই কিডিওকার দেখতে।’

খুব হেসেছিল সেদিন ওরা দু’জনে। একসঙ্গে হো-হো করে। কোথা থেকে কী, হঠাৎ মনে এল হেমাঙ্গের।

‘কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?’ সে অবশেষে জানতে চায়।

‘আমরা গিয়েছিলাম? আমরা ‘কোথায়?’ রাখি উঠে বসল, ‘আমি গিয়েছিলাম।’

‘কোন’ হোটেলে?’

‘হোটেলে নয়। টটি লেনে। ওর স্টুডিওয়।’

‘ফোন করেছিল?’

‘না-না। আমি নিজেই চলে গেলাম। তোমার সোয়েটারের উল পাল্টাতে, গিয়েছিলাম নিউ মার্কেটে। কাছেই টটি লেন। ভাবলাম, যাই সৌম্যর সঙ্গে ফরব। বৌ-বাচ্চা ছিল না।’

হঠাৎ অকারণে ফিসফিস করে রাখি বলল,’বহরমপুর গেছে!’ যেন এটাই আসল কথা, যা গোপনতম গোপন।

‘কী করে হল ব্যাপারটা, বল?’

‘ কী করে হল? কী বলছ তুমি? জন্তু-জানোয়ারের মত টেনে নিয়ে গেল!’

উঠে বসে চুল গোটাতে শুরু করল রাখি। উত্তেজনায় এত বড় নিঃশ্বাস নিল সে, যে এতক্ষণ হুকে আটকে-থাকা ব্রেসিয়ার খুলে তার কোলে পড়ে গেল, ‘জাস্ট লাইক আ বুল। কোনও প্রিটেনশান নেই। কৈফিয়ত নেই। একটা কিস পর্যন্ত করেনি, তখনও, জানো?’ শুধু মনে হচ্ছিল যেন ডেস্ট্রয় করতে চাইছে কিছু। আমাকে। শাবল দিয়ে গাইঁতি দিয়ে শুধু ঘা দিচ্ছে আমায়। সর্বত্র। পারলে বোধ হয় ছিঁড়ে ফেলত। বিশেষ করে ভাষা। কি যাচ্ছেতাই জাত তুলে সব কথা। ট্যাক্সিতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত একবারও অ্যাপোলোজাইস করল না।’

অনেকক্ষণ চুপচাপ। টিভিতে আজ দুপুরের মতো প্রোগ্রাম শেষ। একটা খিসখিস আওয়াজ হচ্ছিল। এবার হেমাঙ্গ সুইচ অফ করে দেয়।

‘তুমি ওইদিনটা,’ হেমাঙ্গ বলল, ‘না গেলেই পারতে।’

‘বাঃ! আমি কি জানতাম নাকি যে ওইদিনই সত্যি বাবরি ভেঙে ফেলবে। ও কিন্তু জানত, জানো? বিবিসি-তে দেখেও ছিল মনে হয়।’

‘কী করে বুঝলে?’

‘সে আমি বুঝেছি।’ হঠাৎ আবার ফিসফিসিয়ে এল রাখির গলা,’ সে কি রোখ! সে কি আক্রোশ! যেন দাঙ্গায় নেমেছে। পুরো হিন্দু –মুসলমান করে তুলল ব্যাপারটা, বিশ্বাস করো—’ এত বলে হেমাঙ্গর কবজি চেপে ধরে রাখি। তার সর্বাঙ্গ থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে, ‘যেন খুনি। যেন খুন করছে!’

‘আবার ফের সৌম্যকে পাঠালে?’

‘ও তো যাবেই। আঁকার নামে পাগল। আর মাস্টারমশাই বলতে অজ্ঞান। ও তো কিছু জানে না।’ রাখি বলল, ‘ওকে বলা যায় না। আটকাবো কি করে?’

সেদিন মধ্য্যরাতে হঠাৎ খুব মেঘ ডাকাডাকি। তাতে ঘুম ভাঙ্গেনি। একটি বজ্রপাতের শব্দে সে ধড়মড়িয়ে বিছানায় বসে।

সে দেখল, রাখি পাশে নেই। এমন অভিজ্ঞতা তার বিবাহিত জীবনে এই প্রথম বালিশের তলা থেকে রেডিয়াম-লাগানো রিস্ট ওয়াচ বের করে সে দেখল, রাত তিনটে।

পাশের ঘরে দিদিমার সঙ্গে সৌম্য ঘুমিয়ে। বাথরুমে নেই। রাখি বারান্দায় নেই। তাদের ফ্ল্যাটের লাগোয়া ৭ তলা পর্যন্ত একটা ব্লক উঠেছে। ৫ তলা অব্দি উঠে কাজ বন্ধ রয়েছে। ৬ তলা পর্যন্ত বিম লেগে গেছে। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে সে দেখল, নিচে ৫ তলায় একটা ছাদে একটা বিমের পাশে রাখি বসে আছে। আকাশ ঝুলে পরছে মেঘে মেঘে।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে হেমাঙ্গ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
হেমাঙ্গ কাঁধে হাত রাখে রাখির। রাতে খোঁপা দেখে ঘুমিয়েছিল। এখন ওর চুল খোলা। খোঁপা ভেঙে চুলের তোড় এখন প্রবল জোলো হাওয়ায় তার পিঠ ভাসিয়ে ফেঁপে উঠছে।

‘কী হয়েছে রাখি?’

উত্তর নেই।

‘কী হয়েছে রাখি?’

‘কিছু না।’

‘নিশ্চয়ই কিছু। বলো আমাকে।’

সে এবার দু’হাতে রাখিকে তুলে দাঁড় করায়।

রাখির পিছনে বিরাট একটা জলার মতো পুকুর। তার পিছনে মাঠ। মাঠ ফুঁড়ে উত্তোলিত ত্রিশূলের মতো একটি বিদ্যুৎ উঠে। কিন্তু, আশ্চর্য, এবার মেঘের ডাক শোনা গেল না। হঠাৎ উঠে দাঁড়াল রাখি। বৃষ্টি শুরু হল বলে? না। দু’হাতে হেমাঙ্গকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ওগো, এই নিয়ে আমি দু’বার পিড়িয়ড মিস করেছি।’ তার বুকের মধ্যেও ভিজে কবুতরের মতো তিরতির করে সে কেঁপে যাচ্ছে।

‘৬ ডিসেম্বর আমার কোনও প্রোটেকশন ছিল না।’

রাখি কেঁপেই চলেছে। বুকে চেপে ধরে সে কাঁপুনি থামাতে পারে হেমাঙ্গ। তাদের দু’জনকে ঘিরে অঝোরে আবার বৃষ্টি নেমে আসে।