Sunday, July 13, 2014

প্যালেস্টাইন আমার রক্তস্নাত বেলাভূমি




কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পৃথিবীকে ঘিরে 
অমীমাংসিত চুক্তি হয় মানুষের রক্তের বিনিময়ে। 
জ্বলে বিশ্বায়নের সুশৃঙ্খল স্থিতির দশদিগন্ত,
জ্বলে গাজা উপত্যকার কোমল নারী ও শিশুরা!

আজো ক্রুশেবিদ্ধ যিশুর রক্তের দাগ শুকায়নি
আজো জেরুজালেমে, নিকৃষ্ট জালেমদেরই 
অস্ত্রের মহড়ায় কম্পিত যীশুর বক্ষ!
আজো ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বাতাসে বাতাসে
প্যালেস্টাইন আর জেরুজালেমের আকাশ প্রদক্ষিণ করে।

রক্তাক্ত আজ আরব সাগরের স্বচ্ছজল
প্রতিশোধের পীড়িত বিষক্রিয়া নিষ্ক্রিয় করে 
মানবতার সর্বশেষ প্রভাবটুকুও।
মানুষের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের এমন বিষাদময় প্রবণতা 
কেবলই লূ-হাওয়ায় প্রতিশ্রুত হয়।

আমাদের পৃথিবী, একান্তই কামনার সুশীতল আবাসভূমি 
আজ ধীরে ধীরে অস্পৃহ হয়ে যাচ্ছে;
বিষাক্ত বাতাসে উড়ছে বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছেটুকু
অন্ধকারে কালো আবরণে বিলুপ্ত হচ্ছে প্যালেস্টাইনের আকাশ! 

কিসের আয়োজনে সীমানা বর্ধিত হয় রক্তের বিনিময়ে!
মানুষের বিরুদ্ধে হিংসার বৈরী  সহিংসতা
পুড়ে নিপুণ বিশ্বাসের আঙিনা, রক্তাক্ত হয় 
মরুভূমির চিক চিক বালুকণা। 
শিশু-কিশোর কলম ফেলে বুক পেতে রাখে তাক করা
অস্ত্রের মুখে। 
বিষাক্ত কার্বনিক ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস গ্রহণে
মৃত্যুর ওপারে জীবনের স্বাদ নিতে আয়ুষ্মান হয়!

যিহোবা অথবা ঈশ্বর কি দেখছেন?
আজ বিশ্বাস বিন্যাস্ত হচ্ছে, ধর্মীয় মহিমা দ্বিধান্বিত!
তবে কি গাজার মানুষের রক্তের সাথে 
যিশুর রক্তের কোন মিল নেই?
ঈশ্বর তোমাকেই জবাব দিতে হবে আজ।
যিহোবা যেমন করে উঠিয়ে নিয়েছিলে যিশুকে
আবার ফিরিয়ে দাও, আজ আবার যিশুকেই 
ফিরিয়ে দিতে হবে গাজা উপত্যাকায়।

স্বর্গের সিঁড়িতে বসে বিধাতা হাসেন;
তিনি দেখছেন, তাঁর দৃষ্টি স্ফীত হয়না!
নৃপতি, তিনি পরিত্রাণ খুঁজেন বিগ্রহ নিসর্গে।
বিকলাঙ্গ সভ্যতা, জরাগ্রস্ত মনুষ্যালয়!  
মানবতা মানে আবাবিলের প্রত্যাশায়
আর করজোড়ে মহাশূন্যে দু’হাত উত্তোলন 
করবেনা। 

বিধাতা, তুমি স্বর্গের প্রাসাদে বসে
জীবনের বিনিময়ে জীবন নিয়ন্ত্রণ করো
তুমি উচ্চাসনে আসীন সর্বশক্তিমান
আমি তোমার শক্তির পরীক্ষায় নতজানু,
প্রকম্পিত বিস্ফোরণের আতংকে তুমিও
আতংকিত হও, মানুষের রক্তে স্বর্গের দেয়ালে 
অঙ্কিত হোক- 'শ্বেত ঘরের' শক্তিধর প্রতিচ্ছবি।

আমাদের বাংলা: ছি তোমাদের ছি !

আমাদের বাংলা: ছি তোমাদের ছি !: ছি তোমাদের ছি ! Posted by  Ahmed Hussain Bablu  on July 12, 2014 at 12:32pm এ কোথাকার সভ্যতা আর এ কোন জাতির দেশ মানুষ মারার উল্ল...

ছি তোমাদের ছি !


ছি তোমাদের ছি !

এ কোথাকার সভ্যতা আর
এ কোন জাতির দেশ
মানুষ মারার উল্লাসে যে
বিষায় পরিবেশ ।
শিশুর রক্তে মা ভাসে রোজ
এমন অনাচার       
বিশ্ববাসী দেখবে চেয়ে
কেমন নির্বিকার ?
ঘৃণ্য এমন রাজনীতি, ধিক
কাপুরুষের দল
অস্ত্রে হয়েও শক্তিশালী
ভীরু মনোবল ।
নির্বিচারে মানুষ নিধন
কী পেয়েছে কী
আওয়াজ তুলুক বিশ্ববিবেক
ছি তোমাদের ছি !

আমাদের বাংলা: কৈফিয়ত

আমাদের বাংলা: কৈফিয়ত: কৈফিয়ত Posted by  আবু মকসুদ  on July 13, 2014 at 4:05pm প্রিয় পাঠক আপনাকে শুভেচ্ছা। আমি মাঝে মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে দুয়...

কৈফিয়ত


কৈফিয়ত




প্রিয় পাঠক আপনাকে শুভেচ্ছা। আমি মাঝে মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে দুয়েক ছত্র লিখি মনের ক্ষোভ, হতাশা, অক্ষমতা প্রকাশের জন্য, বলা বাহুল্য এসব লেখা উচ্চমার্গয় কিছু হয় না ওভাবে চিন্তা করেও লিখি না। নিজের ভাব অন্যের সাথে আদান প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা, এসব লেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কোন কারণ নেই, ফেইসবুকে কিংবা ব্লগে এরকম অসংখ্য লেখা অসংখ্য বার লেখা হয়েছে এবং হবে কিন্তু কোন প্রভাব রাখবে সে আশা বাতুলতা মাত্র। তবুও আমি এবং আমার মত আরো অনেকে পণ্ডশ্রম করে যাবে, কি কারণে এ প্রশ্নের উত্তর উহ্য থাকুক অথবা হয়ত কোন উত্তর নাই।
সম্প্রতি লেখা একটা ছড়া আপনাদের নজরে এসেছে দুয়েকজন সহৃদয় মন্তব্যও করেছেন, আমি প্রীত। ছড়াটা আপনাদের ভাবাতে পেরেছে নাড়া দিতে পেরেছে জেনে পুলকিত বোধ করছি। সাম্প্রতিক সময়ে ইজরাইল এবং ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে হতাহত শিশুদের কিছু ছবি ইন্টারনেটের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে নিষ্পাপ শিশুদের প্রাণহীন শরীর দেখে যেকোনো প্রাণীরই আত্মা কেঁদে উঠার কথা, যেহেতু আমিও প্রাণী প্রজাতি সেই হেতু এ ছবিগুলো আমাকেও ছুঁয়ে গেছে, ছুঁয়ে যাওয়ায় আমার অক্ষমতা কিংবা আক্রোশ আমি এভাবে ব্যক্ত করেছি। রাগের বহিঃপ্রকাশ কিংবা আক্রোশের অনুবাদ কোন নিয়ম নীতি মেনে হয় না, আমারও হয় নি। আমি শুধু সাময়িক উপশমের উপায় খুঁজতে চেয়েছি, হয়ত আমার এই উপায় সবার মন-পুত হবে না, না হওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আমি মনে করি তীব্র বা জোরালো কোন কর্মকাণ্ড আমরা যদি না দেখাতে পারি তা হলে এ সমস্যার আদৌ কোন সমাধান হবে না।
আমার লেখাটায় হিটলারের প্রতীকী পুনরুত্থান দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন মানবতার ঘৃণিত ব্যক্তির বন্দনাকে অনেকে আধুনিকতার বিপরীতে অবস্থান দেখছেন, অনেকেই একে ধর্ম যুদ্ধের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন। সবার মতের সাথে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বলতে চাই আমি হিটলারের অনুসারী নই ঐ যুদ্ধবাজকে আদর্শ মনে করার কোন কারণও আমি দেখি না কিন্তু ফিলিস্তিন এবং ইজরাইলের সমস্যার চিরস্থায়ী একটা সমাধানের জন্য আমি ওইরকম একচোখা কাউকে চাই। ইজরাইল এবং ফিলিস্তিনকে নিয়ে বিশ্ব যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে হিটলারের মত একচোখা উন্মাদই পারে এর এর একটা হেস্ত-নেস্ত করতে। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মত, সবাইকে একমত হতে হবে এর কোন দিব্যি আমি দিচ্ছি না।
ধর্ম রক্ষায় শয়তানের সাথে আঁতাত নতুন কিছু নয়, আমাদের সাহিত্যে কিংবা ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। দীর্ঘ লেখাও এ নিয়ে তৈরি করা সম্ভব আপাতত সে দিকে না গিয়ে এটুকুই শুধু বলব যে- মহামতি কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে পাণ্ডবদের পক্ষে যুদ্ধের দাওয়াত দিতে কর্ণের কাছে গিয়েছিলেন, কর্ণ নিশ্চয় ফেরেশতা সম্প্রদায়ের কেউ ছিলেন না। রাবণ বধের প্রাক্কালে রামকেও সুগ্রীব, বালির মত রাক্ষসদের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হিটলারের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাথে মিত্রতার বিষও ব্রিটেন আমেরিকাকে পান করতে হয়েছে, উল্লেখ্য পশ্চিমা বিশ্বের কাছে রাশিয়া এবং সমাজতন্ত্র তখন শয়তানের প্রতিরূপই ছিল।
যদিও আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন কারণ দেখছি না তবু সুহৃদ, শুভানুধ্যায়ীদের কাছে নিজের বক্তব্যকে পরিস্কার করার উদ্দেশ্যে এ লেখা। আশা করছি আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে পেরেছি, সবাইকে শুভেচ্ছা।
হিটলার বন্দনা-
ফিলিস্তিনে মরছে মানুষ
বিশ্ব বিবেক বন্ধ
আমেরিকা ব্রিটেন তাদের
চোখে ঠুলি, অন্ধ!
বিশ্ব মোড়ল দেখছে চেয়ে
গাজার বুকে লাশ
ইজ্রায়িলি পশুর দলে
করছে যে উল্লাস।
মরছে শিশু বৃদ্ধ নারী
মরছে যুবক ভাই
রক্ত নদী বইছে তবু
করছে যে খাঁই খাঁই।
পশুর দলে সমস্বরে
গাইছে ঘৃণার গান
এই পশুদের থামাতে চাই
হিটলারের উত্থান।
আসুক ফিরে আবার সেই
বীর পুরুষ হিটলার
সময় হলো ভাঙ্গতে আবার
জায়ানবাদীর ঘাড়।

আমাদের বাংলা: গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল

আমাদের বাংলা: গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল: গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল Posted by  Golam Kabir  on July 13, 2014 at 4:24pm গাজায় রক্তস্রোত এবং আজকের বিশ্বকাপ ফ...

গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল





গাজায় রক্তস্রোত এবং আজকের বিশ্বকাপ ফাইনাল!

আজকে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা। খুব ভালো লাগতো যদি এই মূহুর্তে জানতে পারতাম- খেলোয়াড়রা মানব হত্যা শিশু হত্যা বন্ধ করার দাবিতে আজকের খেলা থেকে অনির্দিষ্টকাল বিরত থাকার ঘোষনা দিয়েছেন!
ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে তোলপাড় ছিলো বিশ্ব। ইয়াসির আরাফাতের মতো নেতাও এই সমস্যা নিরসনে জীবন বিপন্ন করেও সমাধানে পৌছুতে পারেননি। ধর্মভিত্তিক এই সমস্যাই শুধু নয় আরো বহুবিধ সমস্যাজাত চরম অমানবিক পৈশাচিক লোমহর্ষক ঘটনা পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বের আনাচেকানাচে ঘটে চলেছে ধারাবাহিকভাবে, তার হিসাব নেই। রাজনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক ভাবে ধর্ম বিষয়টির অনুপ্রবেশই এই সমস্যটির সৃষ্টি করেছে আদিকাল থেকেই। 
জেহাদ এবং ক্রসেড সংগঠিত হচ্ছে ঈশ্বর এবং আল্লাহ-এর নামে! এক দল অন্য দলকে মারছে স্বদলের স্রষ্টার হুকুমে! হুকুম গুলি বর্ণিত হয়েছে স্রষ্টাদের রচিত গ্রন্থসমুহে! সুতরাং কি করে শেষ হতে পারে এই অমানবিক পৈশাচিক শিশু হত্যা, মানব হত্যা, ধর্ষন, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি, কে করবে এর সমাপন! সুন্নি মুসলিম মতে ইমাম মেহেদী, খৃষ্টান মতে যিশুর উত্থান, হিন্দু মতে ব্রম্মের উত্থান এমনি অনেক মত ও পথের নানাবিধ প্রত্যাশাও রয়েছে মানব জাতির এবং সেইসব প্রত্যাশিত লগ্নে পৌছাবধি নানাবিধ সম্ভাব্য ঘটনার যে সকল বিবরণ বর্ণিত রয়েছে ঈশ্বরদের গ্রন্থগুলিতে, সেই মতে চলমান ঘটনাগুলির কারণ হিসেবে ঈশ্বরদের ইচ্ছারই প্রতিচ্ছবি মনে হয় এগুলো! তাছাড়া-''ঈশ্বরের ইচ্ছা ব্যতিত গাছের পাতাটিও নড়েনা" জাতীয় ধর্মীয়-মানবিক বিশ্বাস মতে এসবতো ঘটবেই, যেনো অনেকটা সেরকমই!
আমাদের বাংলাদেশে হুসেইন মযহাম্মেদ এরশাদের শাসনামলে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তার আগমনকে তাতক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় মনে হয়েছিলো এবং তার শুরুটাও ছিলো খানিকটা ব্যতিক্রমি
কিন্তু পরবর্ত্তীতে তিনিও যখন মাথায় টুপি নিয়ে শুক্রবারে মসজিদে মসজিদে গিয়ে তার অদ্ভুত স্বপ্নের কথা শুনিয়ে ধর্মপ্রাণ বাংগালি মোসলমানদের মগজ ধোলাই করে, নারীদের স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভুতিকে নাড়া দিয়ে অবশেষে সেই ধর্মীয় আবেশে ম্রিয়মান জাতিকে ক্রমে ক্রমে তার স্বৈরশাসনের জাতাকলে পিষ্ট করছিলেন তখন টের পেলো জাতি। ৯০ এর গণ উত্থানের মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় নিতে হলো সিংহাসন থেকে! অথচ তার অব্যাবহিতকাল পরেই অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি পেয়ে গেলেন ৩৫ টি আসন!
রামায়ন- এর রাবন দানবীয় অশুভ শক্তির বলে শুভ শক্তি (?) সম্পন্ন দেবতাদের শেষ করে দিতে প্রচেষ্ট থেকেও রামের শক্তির নিকট পরাস্ত হলো বাল্মিকীর রচনায়! কিন্তু বাংগালি কবি মাইকেল মধুসুদন সেই দানব রাবনের শৈর্য- বীর্যের প্রতি সম্মোহিত হয়ে রচনা করেছেন "মেঘনাদ বধ" মহাকাব্য, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে রয়েছে!
হিটলার জার্মান থেকে সারা বিশ্ব দখলের জন্য তার নাতসী বাহিনী নিয়ে বিষাক্ত বিষময় করে তুলেছিলো পৃথিবী সেখানেও ছিলো তার জায়ানবাদ, ধর্মবাদ! ইহুদীবাদকে তাই সে চেয়েছিলো কবর দিতে!
কিন্তু এখন যদি শোনা যায় " এরশাদের মতো একজন সিংহ পুরূষ দরকার দেশকে ঠিক করতে হলে" তাহলে কেমন শোনাবে তা? ঠিক সেভাবে যদি শোনা যায় হিটলারের মতো একজন জায়ানবাদী দরকার এখন ইহুদীবাদ ধ্বংসের জন্য- তাহলেই বা কেমন শোনায়! কেমন লাগে যখন তামিলে শত শত হিন্দু বিনাশ করে রাবন আর অসুরদের উত্তরসুরী?
কেনো মরে কাটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানী নামক মানুষেরা! কেনোই বা কাটাতার দিয়ে রচিত সীমান্ত! কেনো হিন্দুস্তান (আসলে- হিন্দুর স্থান) আর কেনোই বা পাকিস্তান ( আসলে- মুসলিম স্থান)!
বড়ই অমানবিক গাজায় বোমা মেরে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে শিশু হত্যা, বড়ই নির্মম! কিন্তু মানব জাতিকে ভাবতে হবে কোথা থেকে শুরু এর, কি হেতুতে!
গেলো বছর যখন সাভারে সহস্রাধিক শ্রমিক পরিচয়ের নারী-পুরুষ মানব সন্তানগুলোর নির্মম মৃত্যু হলো, যখন প্রতিদিন মৃত মানুষদের লাশ তোলা হচ্ছিলো দেশে তখন লন্ডনে বৈশাখী মেলার আনন্দ আয়োজন আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম স্টেটাস দিয়ে! আর তাই আজকের এই অনুভুতি বিশ্বকাপ খেলার ফাইনাল আনন্দ নিয়ে, ভালো লাগতো যদি না দেখতে হতো এই বুর্জুয়া-লালিত চোখ ও মগজ ধোলাইকারী আনন্দগুলো! বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়ামোদী মানুষদের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা।

লন্ডন ১৩ জুলাই ২০১৪

Saturday, July 12, 2014

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের গল্প : ভারতবর্ষ



‘সঈদুল’ রাখি বলল, ‘ আমাকে চুমু খেয়েছে।’

কিছু নদী আছে, যাতে জোয়ার-ভাটা খেলে না। হেমাঙ্গের মুখ সেই জাতীয়। মনোভাবের, মুখ দূরস্থান, তার মনেও কোনও ছায়া পড়ে না। অনুভব, আবেগ, এ-সব গ্রহণ করার মতো তার মন আছে কিনা, সে নিজেও ভাল বোঝে না। থাকলে, মুখে-চোখে না হোক, অন্তত মনে ধরা দেবে এই যদি হয় পূর্বশর্ত, তাহলে মানতেই হয় যে ও- ব্যাপারে আজও সে প্রামাণ্য নয়।
অনুভব, আবেগ-বিশেষত প্রেম সংক্রান্ত যেগুলো—সেসব সরল জিনিস। কিন্তু-আবেগ সমূহের মধ্যে জটিলতম যেগুলো, যেমন ধরা যাক, জিঘাংসা কি রিরংসা—যে দুটো নাকি মানবিক হয়েও অনেকখানি পাশবিক, একটা প্রমাণ তো রেখে যাবে তারা! একটা দাগ রেখে যাবে! মুখে-চোখে না রাখুক, অন্তত মনে! কিন্তু হেমাঙ্গের ক্ষেত্রে প্রমাণ কই যে তারা ছিল বা আছে? বিশেষত ওই জিঘাংসার ব্যাপারটা। না—না, সেরকম নেই কেউ তার জীবনে, তার জীবনে কখনও দেখা দেবে না সে-যে, খুন হতে পারে , তার মতো মানুষের হাতে। আত্মহত্যা? হ্যাঁ, সেও একটা খুন বটে, আবার ঠিক খুনও নয়। সেই জন্যই তো ফাঁসি হয় না, বা যাবজ্জীবন। প্রকৃত খুন হলে হত নিশ্চয়ই। তাছাড়া, তাই যদি হবে লোকে লিখে যায় কেন যে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়?’ মানে তো একটাই। আমাকে কেউ খুন করেনি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ খুনী নয়। তাই, রাগ-দুঃখ, আনন্দ-অভিমান থাকে থাক, না-থাকে থাক, শেষমেস অমনিই দাঁড়িয়েছে তার ভাবখানা। জন্ম-প্রতিবন্দী তো হয় অনেকে। হয় না? কালা, বোবা, জড়বুদ্ধি, বগলে-ক্রাচ, অন্ধ, হ্যাঁ জন্মান্ধ... কত রকম তো আছে। জোয়ার-ভাটা নেই, এমন নদী আছে কত।

‘ইনফ্যাক্ট’, প্রায় খবর পড়া গলায় রাখি বলল, আই হ্যাড টু স্লিপ উইথ হিম।’

হেমাঙ্গ চুপ করে আছে। থাকবে জানা ছিল। স্বামীকে ঠিক বুঝতে একটুও ভুল করেনি রাখি। ১৩ পেরিয়ে ১৪য় পড়ল তাদের দাম্পত্য, এ-টুকু না-বোঝার কথাও না। যাদের বলা যায় না, মেয়েরা এ-সব কথা তাদের বলে না। সেই সব স্বামীকে। মৃত্যু পর্যন্ত সে বোঝা বহে নিয়ে যায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে তার প্রয়োজন ছিল না। তাই বোঝা নামিয়ে রাখল। যদিও ঝাড়া দুমাস ধরে ভেবেছে। কেননা, ঘটনা তো মাস দু’ই আগের। সেই যেদিন বাবরি। তারপর, আজ, অবশেষে বোঝা নামিয়ে রাখল। যে, যা ছিল অবধারিত, অথচ, অযথা দেরি হচ্ছিল এবং অকারণে, তা ঘটে গেছে।

যা, বলার, তা বলা হয়ে গেছে, অন্তত, মোদ্দা কথা যেটুকু। কিন্তু, শত হলেও, ব্যাপারটা তো সারমেয়ো-সমাজের নিয়মে হয়নি। যে, মেটিং সিজনে এক কুকুরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক কুকুরির। আর মদ্দাটা ছিল ভারি ষণ্ডা, বাকিগুলো তাই লেজ গুটিয়ে তাকে পথ ছেড়ে দেয়। আর তাই, যা হবার, তা হয়ে গিয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আর উচ্চবাচ্য না করলে ব্যাপারটা ফলত তাই দাঁড়ায়। কিন্তু, গর্হিততম কাজ, এমন কি ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে এলেও, মানুষ মানুষই থেকে যায়। ফাঁসির দড়ি থেকে যে ঝুলছে, দুলছে, সকলেই জানে, সে একজন মানুষ। সে তুলনায় ৬ ডিসেম্বরের বাবরি ভাঙার দিন যা ঘটে গিয়েছে সে তো কিছুই না। সত্যি বলতে বাবরি মসজিদ যে তখনই ভাঙছে, রাখি জানত না। জানা গেল বিকেল ৭টার খবরে। আর ঘটনা ঘটেছে সেদিন দুপুরে। সঈদের টটি লেনের স্টুডিওয়। অবশ্য সঈদ হয়তো জানত মসজিদ ভাঙার ব্যাপারটা। বিবিসি তো তখন থেকেই দেখিয়েছিল, শাবল গাঁইতি নিয়ে যখন যখন ওরা গম্বুজে উঠে গেছে। সে নিশ্চয়ই দেখেছিল। সে যা জানত সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল রাখি। দোতলায় স্টুডিওয় অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে ছেলে সৌম্যকে বসিয়ে রেখে সে যখন নিচে নেমে এসেছিল, মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ কী ভেবে নিয়ে, কাঁধে হাত রেখেছিল রাখির। গুলি বর্ষণের মতো তার চক্ষুকোটর থেকে বেরিয়ে আসা, কী অনর্গল দৃষ্টিপাত। তার হাত ধরে সেভাবে বেডরুমে ঢুকেছিল সাঈদ, যেভাবে, যুদ্ধের সময় মানুষ আত্মরক্ষার্থে ট্রেঞ্জে ঢোকে। যদিও সেদিন সন্ধ্যাবেলা, ওদের ট্যাক্সিতে তুলে দেবার সময় পর্যন্ত সঈদ কিছুই বলেনি। কিন্তু, মসজিদের প্রথম গম্বুজ তখনই ভেঙে পড়ে। সেদিন শনিবার। দুপুরবেলা। যখন সঈদ বিছানা ভাঙছে। পরে সময় মিলিয়ে দেখেছে রাখি।
রাখি তাই কথা বাড়াল, ‘ইচ্ছা আমার ছিল না মোটেই। কিন্তু, জানো তো, হ্যাউ দিজ থিংস হ্যাপেন। অ্যান্ড ইন্সপাইট অব ইওরসেলফ।’

ঠিক দুমাসের মাথায় আজ আর এক শনিবার। আজও দুপুরবেলা। রাখির মাথা আজ হেমাঙ্গর বুকের কাছে। হেমাঙ্গর রোমবহুল লম্বা হাত তার উন্মুক্ত পিঠের ওপর মেরুদাঁড়ায় প্রারম্ব পর্যন্ত পড়ে আছে।
হেমাঙ্গ এতক্ষণ একটাও কথা বলেনি। কথা বলা দূরে থাক, একটা ভাবনাও তার মনে জাগেনি এখনও। ৬ ডিসেম্বর যখন বাবরি ভাঙা হচ্ছিল, সে ছিল ইন্দোরে। এন টি সি-র বন্ধ কারখানাগুলো নিয়ে লেবার সেক্রেটারি অহল্যা বান্দেকরের সঙ্গে মিটিং—সঙ্গে ওখানকার শ্রমিক নেতা লোকেশ গাউর, প্রকাশ জৈন এরা সব। হঠাৎ খবর এল। সেক্রেটারির এ্য্যান্টি চেম্বারে ‘সোনি’ টিভিতে তারাও বিবিসি-তে দেখল যা দেখার। তখন কি, যা ঘটছে, তার বেশি কিছু, কোনও ভাবনা, তাদের মনে এসেছিল? যা ঘটে যাচ্ছে, তাকে, ফর্ম এবং কন্টেন্টে, সর্বাংশে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল তখন? বলতে হয় তাই আমরা বলি, ওকে চিনি, ওটা জানি। এমনটা হবে জানতাম। কত ভুল জানি আমরা তা বোঝা যায়, জানার বাইরে যখন কিছু ঘটে যায়, তখন। ওই যে আমার হাতটা, যা এখন রাখির পিঠ জুড়ে আছে, কতদিনের চেনা, তবু আমি কি ওকে চিনি! ওকি, সত্যিই আমার। আমার বুকে যার নিশ্বাস পড়ছে, যে একতরফা, একা-একা ভালবাসে আমাকে, হ্যাঁ, ভালই তো বাসে, ভালবাসায় যে রেখেছে বিশ্বাস, সেও কি আমার খুব চেনা, জানা? আমি তার আবেগ-অনুভবকে চিনি?

‘কী ব্যাপার, তুমি কিছু বলছ না যে!’

কী যে বলা যায়, তা মনে এসে যাবে ভেবেই হেমাঙ্গ এতক্ষণ খাটের পাদদেশে টিভির দিকে তাকিয়ে ছিল। সুশিক্ষিত ওষ্ঠলীলা ও দুই হাতের নিপুণ মুদ্রা সহযোগে বোবা ও কালাদের জন্য টিভিতে খবর বলা হচ্ছে। চৌকো খুপরির মধ্যে বিলম্বিত লয়ে খবর পড়ে যাচ্ছে আর একটি মেয়ে, যদিও শোনা যাচ্ছে না কিছুই। হেমাঙ্গ শুনতে চেয়েছিল! বাবরির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এক জায়গায় সামিয়ানার নিচে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রামলালার বিগ্রহ। পূজা ও ভজন চলছে, তাও দেখাল। ভক্তবৃন্দের লম্বা লাইন। মিলিটারি। জনসভায় লালকৃষ্ণ আদবানি। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে রাখি ‘পরে শুনো আবার তো বলবে’ বলে সাউন্ড অফ করে দিয়েছে। কথার জন্য হেমাঙ্গ তাই ঘরজোড়া জিনিসপত্রের দিকে তাকায়। ডাইনিং স্পেসে চলে যায় তার দৃষ্টি, ঘর ছেড়ে। কাঁধে-পতাকা লেনিনের প্রাগ্রসর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘সৌম্য কোথায়?’

‘ওর তো আজ ছবির লেসন। ওর ওখানে গেছে।’

নামটা উচ্চারণ করল না রাখি। তাই হেমাঙ্গ জানতে চাইল, ‘সঈদের ওখানে?” নইলে তার প্রয়োজন ছিল না।

আদবানির ঠোঁট নড়ছে। মন্দির ওঁহি বানায়েঙ্গে।

‘লোকটার সঙ্গে হিটলারের একটা মিল আছে।’ গণতান্ত্রিক শিল্পী সঙ্ঘের নেতৃস্থানীয় সভ্য সঈদুল ইসলাম একদিন হেমাঙ্গের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘কোথায় বলতো?’

‘দু’জনেই ফ্যাসিস্ট?’

‘না’, সঈদুল বলেছিল, ক্যানভাসের মূল রঙ লালে সবুজে মিশিয়ে ও কিছুটা হরিদ্রাভ করে দিতে দিতে, ‘দু’জনকেই কিডিওকার দেখতে।’

খুব হেসেছিল সেদিন ওরা দু’জনে। একসঙ্গে হো-হো করে। কোথা থেকে কী, হঠাৎ মনে এল হেমাঙ্গের।

‘কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?’ সে অবশেষে জানতে চায়।

‘আমরা গিয়েছিলাম? আমরা ‘কোথায়?’ রাখি উঠে বসল, ‘আমি গিয়েছিলাম।’

‘কোন’ হোটেলে?’

‘হোটেলে নয়। টটি লেনে। ওর স্টুডিওয়।’

‘ফোন করেছিল?’

‘না-না। আমি নিজেই চলে গেলাম। তোমার সোয়েটারের উল পাল্টাতে, গিয়েছিলাম নিউ মার্কেটে। কাছেই টটি লেন। ভাবলাম, যাই সৌম্যর সঙ্গে ফরব। বৌ-বাচ্চা ছিল না।’

হঠাৎ অকারণে ফিসফিস করে রাখি বলল,’বহরমপুর গেছে!’ যেন এটাই আসল কথা, যা গোপনতম গোপন।

‘কী করে হল ব্যাপারটা, বল?’

‘ কী করে হল? কী বলছ তুমি? জন্তু-জানোয়ারের মত টেনে নিয়ে গেল!’

উঠে বসে চুল গোটাতে শুরু করল রাখি। উত্তেজনায় এত বড় নিঃশ্বাস নিল সে, যে এতক্ষণ হুকে আটকে-থাকা ব্রেসিয়ার খুলে তার কোলে পড়ে গেল, ‘জাস্ট লাইক আ বুল। কোনও প্রিটেনশান নেই। কৈফিয়ত নেই। একটা কিস পর্যন্ত করেনি, তখনও, জানো?’ শুধু মনে হচ্ছিল যেন ডেস্ট্রয় করতে চাইছে কিছু। আমাকে। শাবল দিয়ে গাইঁতি দিয়ে শুধু ঘা দিচ্ছে আমায়। সর্বত্র। পারলে বোধ হয় ছিঁড়ে ফেলত। বিশেষ করে ভাষা। কি যাচ্ছেতাই জাত তুলে সব কথা। ট্যাক্সিতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত একবারও অ্যাপোলোজাইস করল না।’

অনেকক্ষণ চুপচাপ। টিভিতে আজ দুপুরের মতো প্রোগ্রাম শেষ। একটা খিসখিস আওয়াজ হচ্ছিল। এবার হেমাঙ্গ সুইচ অফ করে দেয়।

‘তুমি ওইদিনটা,’ হেমাঙ্গ বলল, ‘না গেলেই পারতে।’

‘বাঃ! আমি কি জানতাম নাকি যে ওইদিনই সত্যি বাবরি ভেঙে ফেলবে। ও কিন্তু জানত, জানো? বিবিসি-তে দেখেও ছিল মনে হয়।’

‘কী করে বুঝলে?’

‘সে আমি বুঝেছি।’ হঠাৎ আবার ফিসফিসিয়ে এল রাখির গলা,’ সে কি রোখ! সে কি আক্রোশ! যেন দাঙ্গায় নেমেছে। পুরো হিন্দু –মুসলমান করে তুলল ব্যাপারটা, বিশ্বাস করো—’ এত বলে হেমাঙ্গর কবজি চেপে ধরে রাখি। তার সর্বাঙ্গ থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে, ‘যেন খুনি। যেন খুন করছে!’

‘আবার ফের সৌম্যকে পাঠালে?’

‘ও তো যাবেই। আঁকার নামে পাগল। আর মাস্টারমশাই বলতে অজ্ঞান। ও তো কিছু জানে না।’ রাখি বলল, ‘ওকে বলা যায় না। আটকাবো কি করে?’

সেদিন মধ্য্যরাতে হঠাৎ খুব মেঘ ডাকাডাকি। তাতে ঘুম ভাঙ্গেনি। একটি বজ্রপাতের শব্দে সে ধড়মড়িয়ে বিছানায় বসে।

সে দেখল, রাখি পাশে নেই। এমন অভিজ্ঞতা তার বিবাহিত জীবনে এই প্রথম বালিশের তলা থেকে রেডিয়াম-লাগানো রিস্ট ওয়াচ বের করে সে দেখল, রাত তিনটে।

পাশের ঘরে দিদিমার সঙ্গে সৌম্য ঘুমিয়ে। বাথরুমে নেই। রাখি বারান্দায় নেই। তাদের ফ্ল্যাটের লাগোয়া ৭ তলা পর্যন্ত একটা ব্লক উঠেছে। ৫ তলা অব্দি উঠে কাজ বন্ধ রয়েছে। ৬ তলা পর্যন্ত বিম লেগে গেছে। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে সে দেখল, নিচে ৫ তলায় একটা ছাদে একটা বিমের পাশে রাখি বসে আছে। আকাশ ঝুলে পরছে মেঘে মেঘে।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে হেমাঙ্গ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
হেমাঙ্গ কাঁধে হাত রাখে রাখির। রাতে খোঁপা দেখে ঘুমিয়েছিল। এখন ওর চুল খোলা। খোঁপা ভেঙে চুলের তোড় এখন প্রবল জোলো হাওয়ায় তার পিঠ ভাসিয়ে ফেঁপে উঠছে।

‘কী হয়েছে রাখি?’

উত্তর নেই।

‘কী হয়েছে রাখি?’

‘কিছু না।’

‘নিশ্চয়ই কিছু। বলো আমাকে।’

সে এবার দু’হাতে রাখিকে তুলে দাঁড় করায়।

রাখির পিছনে বিরাট একটা জলার মতো পুকুর। তার পিছনে মাঠ। মাঠ ফুঁড়ে উত্তোলিত ত্রিশূলের মতো একটি বিদ্যুৎ উঠে। কিন্তু, আশ্চর্য, এবার মেঘের ডাক শোনা গেল না। হঠাৎ উঠে দাঁড়াল রাখি। বৃষ্টি শুরু হল বলে? না। দু’হাতে হেমাঙ্গকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ওগো, এই নিয়ে আমি দু’বার পিড়িয়ড মিস করেছি।’ তার বুকের মধ্যেও ভিজে কবুতরের মতো তিরতির করে সে কেঁপে যাচ্ছে।

‘৬ ডিসেম্বর আমার কোনও প্রোটেকশন ছিল না।’

রাখি কেঁপেই চলেছে। বুকে চেপে ধরে সে কাঁপুনি থামাতে পারে হেমাঙ্গ। তাদের দু’জনকে ঘিরে অঝোরে আবার বৃষ্টি নেমে আসে। 

মানুষ

মানুষ


মানুষ হয়ে মানুষ হত্যা
এ কোন ধর্ম হায়
মানুষেরে মেরে উল্লাস করা
এ কোন মানুষ চায়!
এমন হিংস্র মানসিকতা
ধর্মেই শুধু হয়
শিশুর মৃত্যু ফিলিস্তিনে
মানুষ কেমনে সয়!
জেহাদ কিংবা ক্রসেড নিয়ে
গর্ব করে যারা
বুঝেনা কেনো এসব যুদ্ধে
শিশুরাও যায় মারা!
ঈশ্বর এমন নিরব কেনো
নিরব কেনো বিবেক
বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদে লোক
মিছিলে হয়না এক!
বাচাও মানুষ বাচাও শিশু
মানবতা গড়ে আজ
এক্যবদ্ধ হয়ে সমাজ
ভাংগো ধর্ম রাজ।


লন্ডন ১১ জুলাই ২০১৪

Friday, July 11, 2014

যাকে তুমি নাম দিয়েছিলে-বৃষ্টি

What you named-Rain
By Syed Rumman
===============================================
(If you think I would be scared while I am talking to the cloud
Then you will be mistaken
As the cloud is the ultimate expression of my feeling - 
What you named-Rain!)
শঙ্খবীণা,
মেঘের সাথে কথোপকথনের সময় যদি ভাব আমি ভয় পাব
তাহলে তুমি ভুল করবে
কারণ-ও মেঘ আমারই অনুভূতির অন্তিমপর্ব
যাকে তুমি নাম দিয়েছিলে-বৃষ্টি!

শঙ্খবীণা,
যখন তুমি আসবে বলে আর এলে না
আমাকে বললে আর ভালোবাসবে না
আমার মাটির ঘরে আর সলিতার প্রদীপ জ্বালবে না,
বিলাসিত করে সাজাবে আপন সভ্যতা, কড়ির নির্দয় ভুবন
ধূলোকে উপেক্ষা করে হবে তুমি স্রেফ চোষণলোভী পালংকের সম্রাজ্ঞী,
যখনই দেখি সে-ই তুমি অভাবিত প্রথাবদ্ধ নিদারুণ কুশীলব
তখনই কেবল আমি মেঘের সাথে কথা বলি
কারণ ও মেঘ আমারই অনুভূতির অন্তিমপর্ব
যাকে তুমি নাম দিয়েছিলে-বৃষ্টি!

শঙ্খবীণা,
ভুল তো আমিই করেছি
ভুল করে করে সূঁচের ফোঁড়ে হচ্ছি জর্জরিত, দহনে ক্ষরিত,
ভুল তো মানুষই করে, নাকি মানুষেরা ভুল করে না?
কাছে তো ডাকে মানুষই, নাকি মানুষেরা কাছেই ডাকে না?
ভালো তো বাসে মানুষই, নাকি মানুষেরা ভালোইবাসে না...!

শঙ্খবীণা,
মেঘের সাথে কথোপকথনের সময় যদি ভাব আমি ভয় পাব
তাহলে তুমি ভুল করবে
কারণ-ও মেঘ আমারই অনুভূতির অন্তিমপর্ব
যাকে তুমি নাম দিয়েছিলে-বৃষ্টি!


শঙ্খবীণা,
আকাশের বুকে হাত রেখে বলেছিলে-
ভালোবেসে মানুষ হারেও না, হারায়ও না,
শুধু রয়ে যায় দীপ্তিমান শিখা হয়ে।
তবে কি আমি ভালোবেসে আজ হেরে গেছি,
তবে কি তুমি আজ আমাকে হারিয়ে দিয়ে 
আকাশের বুকে ধরবে নৈঃশব্দের পেখম, হেলেনের 
বালখিল্যতা, নাকি তুমি নিজেই হবে মোনালিসা-আমাকে
করে দিয়ে মিকাঈলের সহচর, ভারাক্রান্ত প্যারিস!

আমার নীল আকাশে আজ মেঘ জমতে শুরু করেছে!

শঙ্খবীণা,
আলোর ঘরে আজ শুধু আঁধারের খেলা, গুলিবিদ্ধ প্রজাপতির 
ত্রস্ততা, জলবন্দি মানুষের ব্যর্থতার মিছিল, বিষণ্ন হৃদয় জুড়ে 
কার্তিকের দহন, শূন্যতার বাড়াবাড়ি-কাড়াকাড়ি...
আর নগর দলিত-মথিত করে জলের সরব পাঠ-
তুমি নেই, তুমি নেই, আজ শুধু এইখানে-তুমি নেই...

তবু মেঘের সাথে কথোপকথনের সময় যদি ভাব আমি ভয় পাব
তাহলে তুমি ভুল করবে
কারণ-ও মেঘ আমারই অনুভূতির অন্তিমপর্ব
যাকে তুমি নাম দিয়েছিলে-বৃষ্টি!



১২. ০৩. ০১
মৌলভীবাজার

কবিতাপাড়ার মেয়ে


কবিতাপাড়ার মেয়ে

সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে একদিন আমরা
দুজন বদল করেছি ছায়া;-- ছায়া নিয়ে কে যায় পাহাড়ে?
আমাদের সঙ্গে হাঁটে উলুময়  অরণ্যসন্ন্যাস :
বাতাসে নিঃস্বাস ফেলে নদী একা কেন যে ঘুমায়?
নদীর চোখের নিচে সূর্য এসে শিশুর আনন্দে

উলঙ্গ পরীর মতো কুড়িয়েছে আমাদের ছায়া
আমরা পাহাড় ছেড়ে নেমে আসি নিশ্চেতন দ্বীপে--
আমি  রৌদ্র কুড়িয়েছি; তুমি কেন কুয়াশা কুড়োলে?
কুয়াশা দখল করে আমাদের যৌথ ছায়ামুখ;
অদূরে লণ্ঠন জ্বেলে জেগে আছে অভিন্ন হৃদয়;
পউষের হিমাগারে পড়ে আছে কবি ও কবিতা;
কে এসে আমার বুকে তুলে দেবে শ্রাবণের মেঘ?
সমুদ্র পাহাড়ে উঠে বসে আছে তোমার ছায়ায়--

কতটা নিঃসঙ্গ হলে তাকে তুমি ফেরৎ পাঠাবে?

কবিতা

স্থিতি ও বিস্তার
শিরদাঁড়ায় স্পষ্ট টের পাচ্ছি তোমার স্থিতি আর অমোঘ বিস্তার
এক শুক্লপক্ষ রাতে
ওয়ার্ফ নদীর নিগুঢ় স্রোত-রন্ধ্রে অঙ্কুরিত হয়েছিলো যে ঘুমগাছ
সরক্ত সংশ্লেষনে কী গভীর ছায়াবতী হয়ে উঠেছে আজ!


উন্মাদ ঘোড়ায় চড়ে, দিগ্বিদিক ধুলো উড়িয়ে
 বরং একদল পাহাড়-দস্যু এখোন আমাকে ছুড়ে ফেলে যাক
পর্বতের নিকষতম কোনো গুহায়...
 শিরদাঁড়ায় তো রয়েছেই তোমার স্থিতি

 আর গুহার অন্ধকার ভেদ করেও আমি জানি
 টপ টপ করে ঝরে পড়বে তোমার সিন্ধু সিন্ধু সুর
 বিন্দু বিন্দু ঘ্রাণ আর রক্তধৌত আলো


 ক্ষোভ

 আজ রাতে কায়সারকে শুইয়ে রাখবো নিজের কোলে
 চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়াবো মালহাম কোভের শিয়ালগুলি ডেকে ওঠার আগেই

 ইতিপূর্বে এক দীর্ঘ আত্ম-হনন পর্ব অথবা মৃত্যু-চুম্বনের শেষে
 ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমার মৌন দেবীর সঙ্গে একই বিছানায়
 শুনেছি ঘুমের ভেতর নাকি
 দাঁতের সঙ্গে দাঁত পিষে কড়কড় শব্দ তুলেছি সারারাত
 সুইচ টিপে বাতিগুলি নিভিয়ে দেবার পর
 আমার মুখ নাকি অন্ধকারে নয়;
 ঢেকে গিয়েছিলো অজস্র বল্লমবিদ্ধ নক্ষত্রের ছায়ায়
 আর সিডিতে শুবার্টের ভায়োলিন থেমে যাবার পরও
শ্বাস পতনের সঙ্গে নাকি বেজে উঠেছিলো ধাবমান আর্ত খুরের শব্দ
বিলুপ্ত সব সমুদ্রের ঢেউ বাহিত হাহাকার!

 আজ রাত এইসব আর্তনাদ, এইসব ঘুম পাড়ানো ছায়া
 নেড়েচেড়ে দেখবো নিজ হাতে
আর দেখবো, দাঁত কড়কড় করার পেছনে কি লুকিয়ে আছে
 কতিপয় পুঁজিবাদী কৃমির ষড়যন্ত্র
 নাকি
 দেবীর ধমনীর সঙ্গে মিশে যেতে না পারার প্রমত্ত ক্ষোভ!

দায়........

দায়........

সত্যির সাথে মিথ্যের বিয়েটা আমিই দিয়েছিলাম
কখন,কেন,কিভাবে জানতে চেওনা
অজান্তেই মানুষ তার জানা জানা অনুভূতিগুলো খুব সহজেই ভুলে যায়
ভুলে যায় সম্ভাবনার সমন্নুত হাওয়া
ধূলোহীন স্বাভাবিক চাওয়া
ক্রমান্বয়ে অনেক কিছু পাওয়া ।
আবেগী স্নানে প্রেমিকের ঠোঁটে সিগারেটও তখন বেশ মানায়
জন্মদাতার ভাবাভাবিকে ডাস্টবিনে ফেলে
রহস্যময়ী ভালোবাসার পাজল মেলাতে
দিব্যি মাতে বর্তমান
মাদকহীন কোন এক মাদকতার টানে ।
তারপর সে এক লাল নীল শুরু
আলোহীন সময় বড় বেমানান মনে হয়
প্রশান্তির উঠোনে বুনে রাখা সাফল্যের বীজ
একেকদিন জন্ম দেয়
একেকটি বিকৃত ক্যাকটাস ।
ওরা আষ্টেপিষ্টে চেটে খায় মন
লাবণ্যময়ী বয়স,টুকরো টুকরো ভলোবাসা
এভাবেই কাটে দিন কেটে যায় কাটাতে হয় ।
তবুও হঠাৎ রাতে ভেঙে গেলে সবগুলো ঘুম
সাদাকালো কিছু মুখের কথা মনে পড়ে
পুকুরঘাটের পোয়াতি ঢেউয়ের কথা মনে পড়ে
লুকিয়ে খাওয়া একমুঠো আচারের কথা মনে পড়ে
হেরিকেনের তাপে অকারনেই ঝলসে দেয়া কলমের কথা মনে পড়ে
মেয়াদ উত্তীর্ন কিছু স্বপ্নের কথা মনে পড়ে
বইয়ের শেষপাতায় লিখে রাখা কবিতার কথা মনে পড়ে ।
সত্যিমিথ্যার বিয়েটা যেদিন ভাঙবে
সেদিন প্রজাপতিরা রঙ বদলাবে
চিরচেনা হতদরিদ্র বৃক্ষটি
সবুজ শাড়িতে নিজের লজ্জা লুকোবে
মেঘেরা অবধারিত অবরোধ তুলে
আদর ঝরাবে সবখান জুড়ে
আর স্বার্থপরেরা আবার নাকি মানুষ হবে ।
সেদিন হয়তো আমিও মুক্তি পাবো
মুক্তি পাবো অসংখ্য কুড়িঁ হত্যার দায় থেকে
অবলিলায় ছুড়ে দেয়া অবমাননার দায় থেকে
সজ্ঞানে ছিঁড়ে ফেলা চকচকে কিছু ভবিতব্যের দায় থেকে ।