Sunday, July 13, 2014

গাজায় রক্তস্রোত এবং বিশ্বকাপ ফাইনাল





গাজায় রক্তস্রোত এবং আজকের বিশ্বকাপ ফাইনাল!

আজকে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা। খুব ভালো লাগতো যদি এই মূহুর্তে জানতে পারতাম- খেলোয়াড়রা মানব হত্যা শিশু হত্যা বন্ধ করার দাবিতে আজকের খেলা থেকে অনির্দিষ্টকাল বিরত থাকার ঘোষনা দিয়েছেন!
ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে তোলপাড় ছিলো বিশ্ব। ইয়াসির আরাফাতের মতো নেতাও এই সমস্যা নিরসনে জীবন বিপন্ন করেও সমাধানে পৌছুতে পারেননি। ধর্মভিত্তিক এই সমস্যাই শুধু নয় আরো বহুবিধ সমস্যাজাত চরম অমানবিক পৈশাচিক লোমহর্ষক ঘটনা পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বের আনাচেকানাচে ঘটে চলেছে ধারাবাহিকভাবে, তার হিসাব নেই। রাজনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক ভাবে ধর্ম বিষয়টির অনুপ্রবেশই এই সমস্যটির সৃষ্টি করেছে আদিকাল থেকেই। 
জেহাদ এবং ক্রসেড সংগঠিত হচ্ছে ঈশ্বর এবং আল্লাহ-এর নামে! এক দল অন্য দলকে মারছে স্বদলের স্রষ্টার হুকুমে! হুকুম গুলি বর্ণিত হয়েছে স্রষ্টাদের রচিত গ্রন্থসমুহে! সুতরাং কি করে শেষ হতে পারে এই অমানবিক পৈশাচিক শিশু হত্যা, মানব হত্যা, ধর্ষন, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি, কে করবে এর সমাপন! সুন্নি মুসলিম মতে ইমাম মেহেদী, খৃষ্টান মতে যিশুর উত্থান, হিন্দু মতে ব্রম্মের উত্থান এমনি অনেক মত ও পথের নানাবিধ প্রত্যাশাও রয়েছে মানব জাতির এবং সেইসব প্রত্যাশিত লগ্নে পৌছাবধি নানাবিধ সম্ভাব্য ঘটনার যে সকল বিবরণ বর্ণিত রয়েছে ঈশ্বরদের গ্রন্থগুলিতে, সেই মতে চলমান ঘটনাগুলির কারণ হিসেবে ঈশ্বরদের ইচ্ছারই প্রতিচ্ছবি মনে হয় এগুলো! তাছাড়া-''ঈশ্বরের ইচ্ছা ব্যতিত গাছের পাতাটিও নড়েনা" জাতীয় ধর্মীয়-মানবিক বিশ্বাস মতে এসবতো ঘটবেই, যেনো অনেকটা সেরকমই!
আমাদের বাংলাদেশে হুসেইন মযহাম্মেদ এরশাদের শাসনামলে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তার আগমনকে তাতক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় মনে হয়েছিলো এবং তার শুরুটাও ছিলো খানিকটা ব্যতিক্রমি
কিন্তু পরবর্ত্তীতে তিনিও যখন মাথায় টুপি নিয়ে শুক্রবারে মসজিদে মসজিদে গিয়ে তার অদ্ভুত স্বপ্নের কথা শুনিয়ে ধর্মপ্রাণ বাংগালি মোসলমানদের মগজ ধোলাই করে, নারীদের স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভুতিকে নাড়া দিয়ে অবশেষে সেই ধর্মীয় আবেশে ম্রিয়মান জাতিকে ক্রমে ক্রমে তার স্বৈরশাসনের জাতাকলে পিষ্ট করছিলেন তখন টের পেলো জাতি। ৯০ এর গণ উত্থানের মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় নিতে হলো সিংহাসন থেকে! অথচ তার অব্যাবহিতকাল পরেই অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি পেয়ে গেলেন ৩৫ টি আসন!
রামায়ন- এর রাবন দানবীয় অশুভ শক্তির বলে শুভ শক্তি (?) সম্পন্ন দেবতাদের শেষ করে দিতে প্রচেষ্ট থেকেও রামের শক্তির নিকট পরাস্ত হলো বাল্মিকীর রচনায়! কিন্তু বাংগালি কবি মাইকেল মধুসুদন সেই দানব রাবনের শৈর্য- বীর্যের প্রতি সম্মোহিত হয়ে রচনা করেছেন "মেঘনাদ বধ" মহাকাব্য, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে রয়েছে!
হিটলার জার্মান থেকে সারা বিশ্ব দখলের জন্য তার নাতসী বাহিনী নিয়ে বিষাক্ত বিষময় করে তুলেছিলো পৃথিবী সেখানেও ছিলো তার জায়ানবাদ, ধর্মবাদ! ইহুদীবাদকে তাই সে চেয়েছিলো কবর দিতে!
কিন্তু এখন যদি শোনা যায় " এরশাদের মতো একজন সিংহ পুরূষ দরকার দেশকে ঠিক করতে হলে" তাহলে কেমন শোনাবে তা? ঠিক সেভাবে যদি শোনা যায় হিটলারের মতো একজন জায়ানবাদী দরকার এখন ইহুদীবাদ ধ্বংসের জন্য- তাহলেই বা কেমন শোনায়! কেমন লাগে যখন তামিলে শত শত হিন্দু বিনাশ করে রাবন আর অসুরদের উত্তরসুরী?
কেনো মরে কাটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানী নামক মানুষেরা! কেনোই বা কাটাতার দিয়ে রচিত সীমান্ত! কেনো হিন্দুস্তান (আসলে- হিন্দুর স্থান) আর কেনোই বা পাকিস্তান ( আসলে- মুসলিম স্থান)!
বড়ই অমানবিক গাজায় বোমা মেরে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে শিশু হত্যা, বড়ই নির্মম! কিন্তু মানব জাতিকে ভাবতে হবে কোথা থেকে শুরু এর, কি হেতুতে!
গেলো বছর যখন সাভারে সহস্রাধিক শ্রমিক পরিচয়ের নারী-পুরুষ মানব সন্তানগুলোর নির্মম মৃত্যু হলো, যখন প্রতিদিন মৃত মানুষদের লাশ তোলা হচ্ছিলো দেশে তখন লন্ডনে বৈশাখী মেলার আনন্দ আয়োজন আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম স্টেটাস দিয়ে! আর তাই আজকের এই অনুভুতি বিশ্বকাপ খেলার ফাইনাল আনন্দ নিয়ে, ভালো লাগতো যদি না দেখতে হতো এই বুর্জুয়া-লালিত চোখ ও মগজ ধোলাইকারী আনন্দগুলো! বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়ামোদী মানুষদের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা।

লন্ডন ১৩ জুলাই ২০১৪

No comments:

Post a Comment